পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

জগদিন্দ্রনাথ, সাহিত্যিক শ্রীখগেন্দ্রনাথ মিত্র এবং আরো কেউ কেউ— সকলের নাম আর মনে পড়ছে না।

 মহারাজা বললেন, ‘এই যে হেমেন্দ্রবাবু, গল্প এনেছেন?’

 —‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

 —‘পড়ুন তো শুনি।’

 গল্প পাঠ করতে লাগলুম। শুনতে শুনতেই মহারাজা মাঝে মাঝে সাধুবাদ দিতে লাগলেন। তারপর পাঠ সমাপ্ত হ’লে এমন মুক্ত ও উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে প্রশংসা আরম্ভ করলেন যে, লজ্জায় আমি অধোবদন হয়ে রইলুম। এ স্বভাব আমার আজও যায় নি। মুখের সামনে কেউ বেশী প্রশংসা করলে মনে মনে আমি অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করি।

 তারপর গল্পটি তো “মর্মবাণী”র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হ’ল, সঙ্গে সঙ্গে ছোঁড়া হ’ল যেন বোল্‌তার চাকে ঢিল! কাগজে কাগজে প্রচারিত হ’তে লাগল, গল্পের ভিতর দিয়ে আমি নাকি দুর্নীতি প্রচার ও হিন্দুনারীর পবিত্র সতীত্বকে অপমান করবার চেষ্টা করেছি, প্রভৃতি। সাপ্তাহিক “বসুমতী”তে (খুব সম্ভব সম্পাদক শশীবাবু) আমাকে এক কলমব্যাপী গালিগালাজ না ক’রে ঠাণ্ডা হলেন না (খুব সম্ভব সেদিন তিনি রচনার বিষয়-বস্তু খুঁজে পাচ্ছিলেন না)।

 তারপর যেদিন জগদিন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হ’ল, তিনি বললেন, ‘হেমেন্দ্রবাবু, আমি বলছি, আপনার গল্পটি সুন্দর হয়েছে। যারা গালাগালি দিয়ে ক’রে খায়, তাদের কথায় ক্ষুণ্ণ হবেন না।’

 আমি বললুম, ‘ক্ষুণ্ণ আমি হইনি মহারাজ! দেখতে আমি রোগা বটে, কিন্তু আমার চাম্‌ড়া বড় কড়া, বাক্যবাণ তা বিদ্ধ করতে পারে না।’

 “মর্মবাণী”র কার্যালয় ছিল কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটে, শ্রীমানী মার্কেটের

৯২