পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভানপিটে by°R9 লোকের সুবিধা বড় কম নহে-চক্ষুলজার খাতিরে অন্ততঃ গ্রামের লোকের কাছে সে তো আর ভিজিট লাইতে পারিবে না ? সেবার সতীশ ভিটার মায়া কাটাইয়া ফিরিয়া গেল বটে, কিন্তু দেশের মায়া তাহাকে পাইয়া বসিয়াছিল-পরের বৎসরই সে পুনরায় শীতকালে ছুটী লইয়া গ্রামে ফিরিয়া পৈতৃক ভিটাব বনজঙ্গল কাটাইয়া সেখানে টিনের ঘর তুলিয়া ফেলিল। ছুটি ফুরাইলে আধার কৰ্ম্মস্থানে ফিরিল সেবারও । কিন্তু দেশেব মায়া একবার পাইয়া বসিলে তাকে কি ছাড়ানো সহজ ? চন্দ্ৰগিরি, উদয়গিরির দুৰ্গম গিরিসঙ্কট পার হইয়াও নদীয়া জেলার ক্ষুদ্র গ্রামের ডাক নেপালে গিয়া পৌঁছিয়াছিল। পাব বৎসর সতীশ চাকুরিতে ইস্তফা দিয়া স্ত্রী-পুত্রসহ দেশে আসিয়া বসিল ও গ্রামে প্রাকটিস সুরু করিল, { সে আজ বত্ৰিশ বছর পূর্বের কথা। তখন অলিতে-গলিতে এম-বি, পাশ ডাক্তার হয় নাই, আজ কালকারের মত পাশ-করা ডাক্তার খুজিয়া মেলানো দুর্ঘট ছিল। নিকটবৰ্ত্তী নরহরিহরপুরের বাজারে তখন যাদুরাম স্যাকরা ছিল দেশের মধ্যে বড় ডাক্তার । যাদুরাম বাদে একজন মুসলমান হোমিওপ্যাথ, একজন কবিরাজও ছিল । ইহারা গেল প্ৰবীপের দলে । তরুণের মধ্যে কানাইলাল রায় কলিকাতা হইতে কিসের একখানা সার্টিফিকেটু আনিয়া ডাক্তার সাজিয়া বসিয়াছিল। সতীশ আসিয়াই প্র্যাকটিস জমাইয়া ফেলিল। সে উপরোক্ত হাতুড়েদলের অনুকরণে নরহরিপুরের বাজারে ডাক্তারখানা খুলিয়া আধহাত লম্বা হরফে নিজের নামের সাইনবাের্ড ঝুলাইল না, বা রোগীর বাড়ী আসিয়া স্থানীয় অন্যান্য ডাক্তারদেৱ নিন্দাবাদ করাও অভ্যাস করিল না । গ্রামের বাড়ীর একখানা ঘৱে ঔষধ রাখিত, আলাদা ডিসপেনসারিও ছিল না-রোগীরা আসিয়া বসিত সতীশের বাড়ীর সামনে বটতলায়, তাহদের বসিবার স্থানের পর্য্যন্ত কোনো র্যাবস্থা ছিল না।