কিন্তু সেই বেগের দ্বারাই তিনি দ্রুতগতিতে তাহার পাওয়ার অঙ্কে গিয়া ঠেকিয়াছেন— তখন আবার তাহা হইতে বাহির হইবার জন্য বেদনা এবং নুতন পথে প্রবেশ। আমরা তাঁহার সমস্ত কাব্যগ্রন্থাবলীতে ইহাই দেখিয়াছি— বিশ্ব-উপলব্ধির জন্য উৎকণ্ঠা এবং বারম্বার তাহার বাধা হইতে মুক্তিলাভের জন্য প্রয়াস।
এমনি করিয়া ঠেকিতে ঠেকিতে চলিতে চলিতে অবশেষে কবি এক সময়ে ভারতবর্ষের পথ এবং তাহার মধ্য দিয়া আপনার পথটি পাইয়াছেন ইহাই তাঁহার কাব্যের শেষ পরিচয়। সেই বিপুল ধর্মসাধনার পথ বাহিয়া তাঁহার জীবনের ধারা সাগরসংগমে আপনার সংগীত পরিসমাপ্ত করিতে চাহিতেছে।
কিন্তু ভারতবর্ষের এই পথটি দেশাচারের সংকীর্ণ কৃত্রিম পথ নহে, তাহা সত্য পথ। এইজন্য সকল দেশের সকল সত্যের সঙ্গেই তাহার সামঞ্জস্য আছে। তাহা যদি না হইত তবে কবির কাব্য বিশ্বজনীন সার্থকতার মধ্যে স্থান পাইত না, তাহা সংকীর্ণ স্বাদেশিকতার মরুভূমির মধ্যে বিলুপ্ত হইয়া যাইত।
যাঁহারা সংস্কারগত ভাবে বা পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণের প্রতিক্রিয়াবশতঃ ভারতবর্ষের ধর্মের পথটিকে ধরিবার চেষ্টা করিতেছেন, তাঁহারা ভারতবর্ষকে ভারতবর্ষেরই মধ্যে আবদ্ধ করিয়া দেখিতেছেন। নানা–দেশাগত বিপুল ভাবধারার পরস্পরের সহিত সম্মিলনের বৃহৎ প্রয়াসের মাঝখানে ভারতের ইতিহাসের ভিতরের চিরন্তন অভিপ্রায়ের ধারাটিকে তাঁহারা দেখিতেছেন না। সুতরাং ভারতবর্ষের অতীত তাঁহাদের কাছে চির-অতীত, বর্তমান কেবল দেশাচার ও লোকাচারের জড়সমষ্টি, তাহার কোনো প্রবাহ নাই; এবং ভবিষ্যৎও তাঁহাদের কাছে আকাশকুসুম মাত্র।
১৪