বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রবীন্দ্রনাথের জীবনী সম্বন্ধে এই একটি কথা মনে রাখিতে হইবে যে, তিনি বরাবর নিজের স্বভাবের অন্তর্নিহিত পথ অনুসরণ করিয়া চলিয়াছেন, সেই তাঁহার স্বভাবের মধ্যেই তাঁহার কবিপ্রকৃতি, তপস্বীপ্রকৃতি, ত্যাগীপ্রকৃতি, ভোগীপ্রকৃতি পরস্পর ঠেলাঠেলি করিতে করিতে ক্রমশই পরস্পরের মধ্যে সামঞ্জস্য করিয়া লইতেছে। সেই প্রকৃতিটির মধ্যে অনুভূতি যতই তীব্র হউক, ভোগপ্রবৃত্তি যতই প্রবল হউক, তাহারই মধ্যে কোনো বিশেষ একটি দিকে সমস্ত প্রকৃতিকে আবদ্ধ করিবার বিরুদ্ধে ভিতর হইতে বরাবর একটা ঠেলা ছিল। সেইজন্য নদীর বাঁকের মতো ক্রমাগত একটা হইতে অন্যটায়, এক রস হইতে অন্য রসে তাঁহার স্বভাব আপনার সার্থকতাকে খুঁজিয়া বেড়াইয়াছে এবং অবশেষে ধর্মের মধ্যে আপনার সমস্ত দ্বন্দ্ব ও বিরোধের সামঞ্জস্য লাভ করিয়াছে বলিয়া আপনারই ভিতর হইতে ভারতবর্ষের চিরন্তন সমন্বয়াদর্শকে সে আবিষ্কার করিয়াছে।

 এখানে আমার একটি কৈফিয়ত গোড়াতেই দেওয়া আবশ্যক। অনেকের মনে এ কথা উঠিতে পারে যে, কবির জীবনের ভিতর হইতে তাঁহার কাব্যকে পাঠ করিলে কাব্যের অংশবিশেষের চেয়ে সমগ্রের দিকেই বেশি দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব। জীবনে এক অবস্থা হইতে অন্য অবস্থায় ক্রমাগতই যাইতে হয়, কেবলই ছাড়াইয়া চলাটাই জীবন। সেইজন্য তাহার প্রত্যেক অবস্থার ও অভিজ্ঞতার দিকে অধিকাংশ লোকেরই ভালো করিয়া তাকাইবার অবকাশও থাকে না। অথচ কবিতার মধ্যে জীবনের যে অবস্থাই প্রকাশ পাক-না কেন, কবিতায় তাহার একটি সম্পূর্ণতার ভাব আছে। কবিতার মধ্যে বিচিত্র ও সমগ্র এ দুইয়েরই সমান গৌরব। জীবনে এক সময়ে হয়তো প্রেমের জোয়ার অনির্বচনীয় আবেগে সমস্তকে পূর্ণ করিয়া দেখা দিয়াছে এবং

১৫