তাহার কাল উত্তীর্ণ হইয়া গেলে ভাঁটার মুখে কোন্ কালে সরিয়া গিয়াছে। কিন্তু কাব্য যদি সেই জোয়ারের পরম মুহূর্তের পরিপূর্ণ সুরটিকে ধরে, তবে তাহা বিশ্বমানবের চিরকালের সুর হইয়া বাজিবেই। যে-কোনো দেশে যে-কোনো কালে যে-কোনো মানুষ তাহাকে উপভোগ করিবে, তাহার মধ্যে সংসারের অবশ্যম্ভাবী দশাবিপর্যয়ের আশঙ্কা কোনো দ্বিধার বাধা জন্মাইয়া দিবে না। ইহার কারণ এই যে, জীবনের পরিণামটাই আমরা বড় করিয়া দেখি, কিন্তু কবিতায় কেবলই পরিণাম দেখিলে চলে না, তাহার কোনো বৈচিত্র্যই অবহেলিত হইবার যোগ্য নহে। কবিতার সঙ্গে জীবনের এক জায়গায় একটা ভেদ আছে।
কবিতায় যাহাকে দেখায় তাহাকে একেবারে পরিপূর্ণ করিয়া দেখায়— গাছের যেমন শাখা, পল্লব, ফুল ও ফল একটা হইতে অন্যটা অভিব্যক্ত হইলেও প্রত্যেকটিই যখন দেখা দেয় তখন তাহাকেই চরম বলিয়া মনে হয়। দেশকালপাত্রের মধ্যে কিছুকে সংকীর্ণ করিয়া দেখা কবিত্বের দেখা নহে— মানুষের নিত্য অনুভূতির ক্ষেত্রে সব জিনিসকেই তাহার হাজির করিতে হয়। সেই জন্য কাব্য যখন ব্যক্তিগত হয় তখন আমাদের সকলের চেয়ে বেশি খারাপ লাগে। কাব্যে কবি তাঁহার নিজের অনুভূতিকে এমন করিয়া প্রকাশ করিবেন যাহাতে সেটা তাঁহার নিজস্ব কোনো অনুভূতি না হইয়া সকল মানুষের অনুভূতি হইয়া উঠে।
আমি তো মনে করি কবির কাব্যরচনা ও জীবনরচনা একই রচনার অন্তর্গত, জীবনটাই কাব্যে আপনাকে সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে। সেইজন্য জীবনের ভিতর হইতে কাব্যকে যদি দেখি, অথবা কাব্যের ভিতর হইতে যদি জীবনকে দেখি, তাহাতে কবিতার ব্যক্তিগত দিকটার উপরেই বেশি ঝোঁক দেওয়া হইবে না। কারণ কবিতা জিনিসটাই
১৬