বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এখানে তাহার অপ্রকাশিত পত্র হইতে একটি স্থান উদ্ধৃত করিয়া দিলে আমার কথাটি পরিস্ফুট হইবে।

 ‘আমরা বাইরের শাস্ত্র থেকে যে ধর্ম পাই সে কখনোই আমার ধর্ম হয়ে ওঠে না। তার সঙ্গে কেবলমাত্র একটা অভ্যাসের যোগ জন্মে। ধর্মকে নিজের মধ্যে উদ্ভুত করে তোলাই মানুষের চিরজীবনের সাধনা। বা মুখে বলছি, যা লোকের মুখে শুনে প্রত্যহ আবৃত্তি করছি, তা যে আমার পক্ষে কতই মিথ্যা তা আমরা বুঝতেই পারি নে। এ দিকে আমাদের জীবন ভিতরে ভিতরে নিজের সত্যের মন্দির প্রতিদিন একটি একটি ইঁট নিয়ে গড়ে তুলছে। জীবনের সমস্ত সুখদুঃখকে যখন বিচ্ছিন্ন ক্ষণিক ভাবে দেখি, তখন আমাদের ভিতরকার এই অনন্ত সৃজনরহস্য ঠিক বুঝতে পারি নে— প্রত্যেক পদটা বানান করে পড়তে হলে যেমন সমস্ত বাক্যটার অর্থ এবং ভাবের ঐক্য বোঝা যায় না সেইরকম। কিন্তু নিজের ভিতরকার এই সৃজনব্যাপারের অখণ্ড ঐক্যসূত্র যখন একবার অনুভব করা যায় তখন এই সৃজ্যমান অনন্ত বিশ্বচরাচরের সঙ্গে নিজের যোগ উপলব্ধি করি, বুঝতে পারি যেমন গ্রহনক্ষত্র চন্দ্রসূর্য জ্বলতে জ্বলতে ঘুরতে ঘুরতে চিরকাল ধরে তৈরি হয়ে উঠছে, আমার ভিতরেও তেমনি অনাদিকাল ধরে একটা সৃজন চলছে— আমার সুখ দুঃখ বাসনা বেদনা তার মধ্যে আপনার আপনার স্থান গ্রহণ করছে।’

 কবি রবীন্দ্রনাথ যদি গোড়া হইতেই ধর্মের পথে আপনাকে চালনা করিতেন তাহা হইলে আমরা একতারার একটি তারের সুরই তাঁহার নিকট হইতে পাইতাম, জীবনের নানা তারের নানা বিচিত্র সংগীত পাইতাম না। তিনি যে প্রবৃত্তির পথকে রুদ্ধ করেন নাই, এইজন্যই তাঁহার কবিপ্রকৃতি সমস্ত প্রবৃত্তিকে তাহার একটি বড় সামঞ্জস্যের অন্তর্গত করিয়া বিশ্বের হইয়া উঠিবার চেষ্টা পাইয়াছে। আমাদের

১৮