বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেশের আধুনিক ধর্মসাধনা নিবৃত্তির পথেই প্রধানতঃ চলে, বাহিরকে বিশ্বসংসারকে জ্ঞানে, কর্মে, ভোগে, সকল জায়গায় অস্বীকার করিবার দরুন প্রবৃত্তির স্বাভাবিক চরিতার্থতা তাহাকে লাভ করিতে দেয় না। প্রবৃত্তিগুলিকে পরিপূর্ণভাবে বাহিরে আসিতে দিলেই যে তাহারা বিকৃতির হাত হইতে রক্ষা পায় এবং জীবনকে বিশ্বের সঙ্গে, বৃহতের সঙ্গে সত্যসম্বন্ধযুক্ত করিতে পারে, সে কথা আমরা ভুলিয়া যাই।

 রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আমরা দেখিব যে তাঁহার প্রকৃতি বার বার প্রবৃত্তির ক্ষুদ্র গণ্ডি অতিক্রম করিয়া তাহাকে বিশ্বের মধ্যে, সমগ্রের মধ্যে ব্যাপ্ত করিয়া দিয়াছে। প্রত্যেক অবস্থায় কাব্যের মধ্যে এই বিশ্বযাত্রার জন্য ব্যাকুল ক্রন্দন রহিয়াছে।

 যখন ‘সন্ধ্যাসংগীতে’ আপনার হৃদয়াবেগের জটিল অরণ্যের মধ্যে আপনারই ভিতরে আপনি অবরুদ্ধ থাকিবার বেদনায় কবি পীড়িত তখনও “সংগ্রামসংগীত” “আমি হারা” প্রভৃতি কবিতায় ক্রন্দন বাজিয়াছে— আমার অবরুদ্ধ হৃদয় জগৎকে হারাইতে বসিয়াছে:

বিদ্রোহী এ হৃদয় আমার
জগৎ করিছে ছারখার। ...
উষার মুখের হাসি লয়েছে কাড়িয়া,
গভীর বিরামময় সন্ধ্যার প্রাণের মাঝে
দুরন্ত অশান্তি এক দিয়াছে ছাড়িয়া!...
ফুল ফুটে, আমি আর দেখিতে না পাই!
পাখি গাহে, মোর কাছে গাহে না সে আর!

 যখন ‘ছবি ও গান’ প্রভৃতিতে কল্পনার মোহাবেশের মধ্যে থাকিয়া তাহারই রঙে সব জিনিসকে রঙিন করিয়া দেখিতেছেন, ‘কড়ি ও কোমলে’, ‘চিত্রাঙ্গদা’য় সৌন্দর্যের আবেগ এক অনির্বচনীয় রহস্যে

১৯