বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশ্বজগতের তরে, ঈশ্বরের তরে
শতদল উঠিতেছে ফুটি—
সুতীক্ষ্ণ বাসনা-ছুরি দিয়ে
তুমি তাহা চাও ছিঁড়ে নিতে!

 এই যেমন তাঁহার প্রথমবয়সের তেমনি তাঁহার শেষবয়সের কাব্য ‘ক্ষণিকা’তেও “সৌন্দর্যের সন্ন্যাসী” কবি যখন ভোগক্ষুব্ধ যৌবনকে ছাড়াইয়া ভারশূন্য প্রাণে বাংলা গ্রাম্যপ্রকৃতির বুকের মধ্যে একটি স্থির শান্তির ঘর বাঁধিতেছেন, একটি “আকুল শান্তি বিপুল বিরতি”র মধ্যে সমস্ত সৌন্দর্যকে সহজ করিয়া সরল করিয়া ব্যাপ্ত করিয়া বিরল করিয়া দেখিতেছেন, তখন শেষের দিকে ক্রমেই একটি অতলতার মধ্যে নিমগ্ন হইবার উপক্রম চলিতেছে:

পথে যতদিন ছিনু ততদিন
অনেকের সনে দেখা।
সব শেষ হল যেখানে সেথায়
তুমি আর আমি একা।

 এইরূপে দেখা যাইতে পারে যে কেবলই এক অবস্থা হইতে অবস্থান্তরে আসিবার এই যে একটি ভাব রবীন্দ্রনাথের সমস্ত কাব্যের মধ্যে দেখা যায় তাহার কারণ ঐ যে, তাঁহার কবিপ্রকৃতি আপনার সমস্ত বিচিত্রতাকে কেবলই উদ্ঘাটন করিতে করিতে অগ্রসর হইয়াছে, এবং কেবলই তাহাদের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে তাহাদের বিরোধের মধ্যে একটি বৃহৎ সামঞ্জস্য একটি বৃহৎ ঐক্যকে অনুসন্ধান করিয়াছে। এ যেন ভারতবর্ষের আপনাকে খর্ব করিয়া সকলের মধ্যে প্রবেশ করিবার সাধনার সঙ্গে ইউরোপীয় প্রবৃত্তিমূলক সাধনা মিলিত হইয়া এক অভিনব বৈচিত্র্য রচনা করিয়াছে।

২১