সকলের মধ্যে প্রবেশ করিবার সাধনা —সর্বমেবাবিশন্তি— আধুনিক ধর্মোপদেশসমূহে যে কথাটির প্রতি রবীন্দ্রনাথ সকলের চেয়ে বেশি জোর দেন এবং যে সাধনাটি তাঁহার মতে বিশেষভাবে ভারতবর্ষেরই, সেই কথাটির উল্লেখ করিলাম বলিয়া এখানে আর একটি কথা বলা আবশ্যক।
আমার মনে হয় সকল কবির জীবনের মধ্যেই একটি মূলসুর থাকে। অন্যান্য সকল বৈচিত্র্য সেই মূলসুরের সঙ্গে সংগত হইয়া একটি অপরূপ রাগিণী নির্মাণ করে। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সেই মূলসুরটি কী? সেটি প্রকৃতির প্রতি একটি অতিনিবিড় অতিগভীর প্রেম। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি প্রেম নানা কবির মধ্যে নানা ভাবে বিরাজমান। ইঁহার প্রেমের স্বরূপটি কী?
তাঁহার লেখা হইতেই তাহা উদ্ধৃত করিয়া দিলেই আপনারা স্পষ্ট বুঝিতে পারিবেন:
‘প্রকৃতির মধ্যে যে এমন একটা গভীর আনন্দ পাওয়া যায়, সে কেবল তার সঙ্গে আমাদের একটা নিগূঢ় আত্মীয়তা অনুভব ক’রে। এই তৃণগুল্মলতা, জলধারা, বায়ুপ্রবাহ, এই ছায়ালোকের আবর্তন, জ্যোতিষ্কদলের প্রবাহ, পৃথিবীর অনন্ত প্রাণীপর্যায়, এই সমস্তের সঙ্গেই আমাদের নাড়ী-চলাচলের যোগ রয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে আমরা একই ছন্দে বসানো, তাই এই ছন্দের যেখানেই যতি পড়ছে সেখানে ঝংকার উঠছে, সেইখানেই আমাদের মনের ভিতর থেকে সায় পাওয়া যাচ্ছে। জগতের সমস্ত অণুপরমাণু যদি আমাদের সগোত্র না হত, যদি প্রাণে ও আনন্দে অনন্ত দেশকাল স্পন্দমান হয়ে না থাকত, তা হলে কখনোই এই বাহ্যজগতের সংস্পর্শে আমাদের অন্তরের মধ্যে আনন্দের সঞ্চার হত না। যাকে আমরা জড় বলি তার সঙ্গে আমাদের যথার্থ জাতিভেদ নেই বলেই
২২