বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমরা উভয়ে এক জগতে স্থান পেয়েছি, নইলে আপনিই দুই স্বতন্ত্র জগৎ তৈরি হয়ে উঠত।’

 প্রকৃতির সঙ্গে যোগের এই ভাবটিকে রবীন্দ্রবাবু উত্তরকালে বিশ্ববোধ নাম দিয়াছেন, সর্বানুভূতি বলিয়াছেন। সমস্ত জলস্থল-আকাশকে সমস্ত মনুষ্যসমাজকে আপনার চৈতন্যে অখণ্ডপরিপূর্ণ করিয়া অনুভব করিবার নামই সর্বানুভূতি।

 আমি নিঃসংকোচে বলিতে পারি যে, এই সর্বানুভূতিই কবির জীবনের ও কাব্যের মূলসুর: অন্যান্য সমস্ত বৈচিত্র্য— সৌন্দর্য, প্রেম, স্বদেশানুরাগ, সমস্ত সুখদুঃখবেদনা এই মূলসুরের দ্বারা বৃহৎ বিশ্বব্যাপী একটি প্রসার প্রাপ্ত হইয়াছে। আমি যে দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছি যে, ‘সন্ধ্যাসংগীত’ হইতে আরম্ভ করিয়া আজ পর্যন্ত সকল কাব্যের মধ্যেই যেখানেই জীবন কোনো প্রবৃত্তির ভিতরে বাঁধা পড়িতেছে, সেখানেই আপনার অবস্থাকে অতিক্রম করিয়া আপনার চেয়ে যাহা বড় তাহাকে পাইবার কান্না লাগিয়াই আছে, এই মূলসুরের মধ্যেই সেই ক্রন্দনের অর্থ নিহিত। এই সুরই কবির জীবনের সকল বিচিত্রতাকে গাঁথিয়া তুলিয়াছে— এই সুরই বারম্বার ক্ষুদ্রতার গণ্ডি ছাড়াইয়া বিরাটের সঙ্গে তাঁহার জীবনকে যুক্ত করিয়াছে।

 এইবার তাঁহার জীবনচরিত ও কাব্য উভয়কেই একত্রে মিলাইয়া ক্রমে ক্রমে তাহাদের ভিতরের এই তত্ত্বটি উদ্ঘাটন করিয়া দেখাইবার চেষ্টা করা যাইবে।

২৩