২
রবীন্দ্রনাথের বাল্যজীবনের সকলের চেয়ে বড় স্মৃতির বিষয়, বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে তাঁহার যে একটি নিকট আত্মীয়তার যোগ ছিল, তাহারই আনন্দ। তিনি বলেন, যখন তিনি নিতান্ত বালক, বাড়ির চাকরের হেপাজতে থাকিতেন, তখন জোড়াসাঁকোর বাড়ির দক্ষিণ দিকের জানালার নীচে একটি ঘাটবাঁধানো পুকুর ছিল, সেই পুকুরের পূর্বধারে প্রাচীরের গায়ে একটি প্রকাণ্ড চিনে বট এবং দক্ষিণপ্রান্তে একসারি নারিকেল গাছ ছিল। ভৃত্য তাঁহাকে ঘরে আবদ্ধ থাকিতে বলিয়া কাজে যাইত, সমস্তদিন সেই পুকুর দেখিয়া তাঁহার সময় কাটিত। সেই ডালপালাওয়ালা ঘন বট তাঁহার কাছে কী রহস্যময় ছিল! এক-একদিন নিস্তব্ধ দ্বিপ্রহরে সুদূরবিস্তৃত কলিকাতা শহরের নিস্তব্ধ বাড়িগুলার দিকে চাহিয়া তাহার ভিতরের নানা রহস্যের জল্পনায় সেই বালকের মন উন্মনা হইয়া উঠিত, মাঝে মাঝে চিলের সুতীব্র তীক্ষ্ণ স্বর, ফিরিওয়ালাদের বিচিত্র সুরের হাঁক বিশ্বের সঙ্গে নূতন পরিচয়ের আবেগে সমস্ত চেতনাকে স্পন্দিত তরঙ্গিত করিত।
পরবর্তী কালে এই বাল্যজীবন স্মরণ করিয়া তিনি যে একটি পত্র লিখিয়াছিলেন তাহার কিয়দংশ উদ্ধৃত করিয়া দিই:
‘আমার নিজের খুব ছেলেবেলাকার কথা একটু একটু মনে পড়ে, কিন্তু সে এত অপরিস্ফুট যে ভালো ক’রে ধরতে পারি নে। কিন্তু বেশ মনে আছে, এক-একদিন সকালবেলায় অকারণে অকস্মাৎ খুব একটা জীবনানন্দ মনে জেগে উঠত। তখন পৃথিবীর চারিদিক রহস্যে আচ্ছন্ন ছিল।...গোলাবাড়িতে একটা বাঁখারি দিয়ে রোজ রোজ মাটি খুঁড়তুম, মনে করতেম কী একটা রহস্য আবিষ্কার হবে। ...
২৪