পৃথিবীর সমস্ত রূপরসগন্ধ, সমস্ত নড়াচড়া আন্দোলন, বাড়িভিতরের বাগানের নারিকেল গাছ, পুকুরের ধারের বট, জলের উপরকার ছায়ালোক, রাস্তার শব্দ, চিলের ডাক, ভোরের বেলাকার বাগানের গন্ধ—সমস্ত জড়িয়ে একটা বৃহৎ অর্ধপরিচিত প্রাণী নানা মূর্তিতে আমাকে সঙ্গদান করত।’
অতি অল্প বয়সেই তিনি বিদ্যালয়ে যান, কিন্তু হায়, পৃথিবীর অধিকাংশ কবির ন্যায় জননী বীণাপাণির পদ্মবনটির প্রতি শিশুকাল হইতেই তাঁহার লোভ ছিল, কিন্তু তাঁহার কমল-সরোবরের তীরে গুরুমশায়-অধিরাজিত যে বেত্রবনটা কণ্টকিত হইয়া আছে, সেটাকে তিনি অত্যন্ত বেশি ডরাইতেন। বিদ্যালয়-জীবনের স্মৃতি যে তাঁহার কাছে কিরূপ সুখকর তাহা ‘গিন্নি’ গল্পটি যাঁহারা পড়িয়াছেন তাঁহারাই বুঝিতে পারিবেন। নর্মাল বিদ্যালয়েরই এক পণ্ডিত একটি ছাত্রকে তাঁহার বাড়িতে আপন ভগ্নীদের সঙ্গে পুতুল খেলিতে দেখিয়া ক্লাসে তাহাকে ঐরূপ বিদ্রূপসম্ভাষণ করিয়াছিলেন। বালক রবীন্দ্রনাথ সমস্ত বৎসর তাঁহার ক্লাসে একটি কথারও উত্তর দিতেন না, তাঁহার অভদ্র আচরণ তাঁহাকে এমনি পীড়া দিয়াছিল। অথচ বাংলাভাষার পরীক্ষায় যখন তিনি প্রথম স্থান অধিকার করিলেন তখন উক্ত পণ্ডিত কোনোমতেই তাহা বিশ্বাস করিতে রাজি হইলেন না।
যাহাই হোক বিদ্যালয়ের জীবন তাঁহার কাছে “দুঃসহ জীবন” ছিল। বিদ্যালয়ে তাঁহার পড়াশুনা যে বিশেষ কিছু অগ্রসর হইয়াছিল তাহা নহে। কিন্তু বিদ্যালয়ে পড়াশুনা না করিলেও বাল্যকাল হইতে বাংলা পড়িবার অভ্যাস থাকায় বিচিত্র বাংলা পুস্তক কবি শেষ করিয়া ফেলিয়াছিলেন, তখনকার দিনে এমন বাংলা বই নাম করা শক্ত যাহা তিনি পড়েন নাই। ইহাতে তাঁহার কল্পনার
২৫