খোরাক নিঃসন্দেহ জুটিয়াছিল এবং ভাবপ্রকাশও অনেকটা পরিমাণে বাধাহীন হইয়া আসিয়াছিল।
বাংলা বিদ্যালয় ত্যাগ করিয়া ইংরেজি বিদ্যালয়ে যখন পড়া চলিতেছে, তখন ইঁহার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথকে তাঁহার সঙ্গে হিমালয়ে লইয়া যাইবার প্রস্তাব করিলেন। বালক রবীন্দ্রনাথের পক্ষে এ তখন কল্পনার অতীত। হিমালয় দেখিবেন! এতবড় সৌভাগ্য!
যাত্রার পথে বোলপুরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বাহিরের জগতের সঙ্গে সেই প্রথম পরিচয়, তাহার পূর্বে গঙ্গার তীরে একটা বাগানবাড়িতে কিছুদিনের জন্য বড় আনন্দে যাপন করিয়াছিলেন মাত্র। কবির নিজের কাছে গল্প শুনিয়াছি যে, বোলপুর স্টেশন হইতে শান্তিনিকেতনে রাত্রিকালে পালকি করিয়া আসিবার সময়ে তিনি কিছুই চাহিয়া দেখেন নাই পাছে রাত্রে নুতন দৃশ্যের অস্পষ্ট আভাস চোখে পড়িয়া প্রাতঃকালের নবীন কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টির কিছুমাত্র রসভঙ্গ করে।
বোলপুর হইতে বাহির হইয়া এলাহাবাদ কানপুর প্রভৃতি নানা স্থানে বিশ্রাম করিতে করিতে অমৃতসরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখান হইতে ডালহৌসি পাহাড়ে উঠিতে লাগিলেন। পাহাড়ের অধিত্যকা উপত্যকা-দেশে স্তরে স্তরে তখন চৈত্রের সোনার ফসল বিস্তীর্ণ— দুর্গম গিরিপথ, কলধ্বনিমুখরিত ঝরনা, কেলুবন — এ সমস্ত পার্বত্য ছবি দেখিতে দেখিতে তাঁহার চোখের আর শ্রান্তি রহিল না।
পাহাড় হইতে ফিরিয়া আসিবার কিছু কাল পরে তাঁহার মাতৃবিয়োগ হয়। তখন তাঁহার বয়স বারো। তাহার পর হইতে তাঁহাকে, বিদ্যালয়ে পাঠানো আরো দুরূহ হইয়া পড়িল। এবং ক্রমশ তাঁহার গুরুজন এই বৃথা চেষ্টায় ক্ষান্ত হইলেন। পাহাড়ে থাকিতে পিতার
২৬