বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশ্বসংসার আচ্ছন্ন হইয়া গেল— আনন্দ এবং সৌন্দর্য সর্বত্র তরঙ্গিত হইতে লাগিল।··· আমার কাছে তখন কেহই এবং কিছুই অপ্রিয় রহিল না। পূর্বে যাহাদের সঙ্গ আমার পক্ষে বিরক্তিকর ছিল তাহারা কাছে আসিলে আমার হৃদয় অগ্রসর হইয়া তাহাদের গ্রহণ করিতে লাগিল। রাস্তা দিয়া মুটে মজুর যে কেহ চলিত তাহাদের গতিভঙ্গী, তাহাদের শরীরের গঠন, তাহাদের মুখশ্রী আমার কাছে সৌন্দর্যময় বোধ হইত। সকলেই যেন নিখিল সমুদ্রের উপর দিয়া তরঙ্গলীলার মতো বহিয়া যাইত। রাস্তা দিয়া একটি যুবক আর একটি যুবকের কাঁধে হাত দিয়া যখন হাসিতে হাসিতে অবলীলাক্রমে চলিয়া যাইত তখন তাহা আমার কাছে একটি অপরূপ ব্যাপার বলিয়া ঠেকিত— বিশ্বজগতে অফুরান রসের ভাণ্ডার, হাসির উৎস যেন আমার চোখে পড়িত। কাজ করিবার সময় মানবশরীরে যে আশ্চর্য গতিবৈচিত্র্য প্রকাশিত হয় পূর্বে তাহা আমি লক্ষ্য করি নাই— এখন মুহূর্তে মুহূর্তে সমস্ত মানবদেহের চলনের সংগীত আমাকে একটি বৃহৎ ভাবে মুগ্ধ করিতে লাগিল।

হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি,
জগৎ আসি সেথা করিছে কোলাকুলি।
ধরায় আছে যত     মানুষ শত শত
আসিছে প্রাণে মোর, হাসিছে গলাগলি।
এসেছে সখা–সখী,     বসিয়া চোখোচোখি
দাঁড়ায়ে মুখোমুখি হাসিছে শিশুগুলি!···
পরান পুরে গেল, হরষে হল ভোর,
জগতে কেহ নাই, সবাই প্রাণে মোর।···
যে দিকে আঁখি চায় সে দিকে চেয়ে থাকে,
যাহারি দেখা পায় তারেই কাছে ডাকে।

৩২