বুঝিতে পারা যায়:
ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন!
চরণ-তলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন!···
নিমেষ-তরে ইচ্ছা করে বিকট উল্লাসে
সকল টুটে যাইতে ছুটে জীবন উচ্ছ্বাসে—
শূন্য ব্যোম অপরিমাণ মদ্য-সম করিতে পান
মুক্ত করি রুদ্ধ প্রাণ ঊর্ধ্ব নীলাকাশে।
থাকিতে নারি ক্ষুদ্র কোণে আম্রবনছায়ে
সুপ্ত হয়ে লুপ্ত হয়ে গুপ্ত গৃহবাসে।
এই সময়ের একটু ইতিহাস দেওয়া দরকার। মানসীর অধিকাংশ কবিতাই গাজিপুরে লেখা। কবির ইচ্ছা হইয়াছিল যে পশ্চিমের কোনো রমণীয় স্থানে তিনি একটি নিভৃত কবিকুঞ্জ রচনা করিয়া জীবনটিকে সৌন্দর্যের স্রোতে ভরা কবিত্বের হাওয়ার মধ্যে ভাসাইয়া দেন। কিন্তু সেখানে গিয়া কিছুদিন কাটানোর পরেই তিনি অনুভব করিলেন যে এ সৌন্দর্যের কল্পলোকের মধ্যে চিত্তের তৃপ্তি নাই। কর্মহীন জীবনের একটা অবসাদ তাঁহার চিত্তকে পীড়িত করিতে লাগিল।
রাজা ও রানীতে প্রধান নায়ক বিক্রমের একান্ত ভোগ প্রধান প্রেমের অমন ভয়ানক পরিণাম অঙ্কিত করিবার কারণ, সে প্রেম আপনাকে খাইয়া এবং আপনার সমস্ত নিত্য আশ্রয়কে খাইয়া আপনি বাঁচিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিয়াছিল— মঙ্গলকর্মে বৃহৎ ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাপ্ত করিয়া সফল হইয়া উঠে নাই। নিদারুণ দুঃখের প্রলয়ঘাতে সেই ভীষণ প্রেমের নাগপাশ হইতে মানুষ মুক্তিলাভ করে ইহাই এই নাটকের শেষ কথা।
৪২