জগতে যাহা-কিছু আমরা পাই তাহাকে যে হারাইতেই হইবে, সমস্তই যে একে একে মৃত্যুর হাতে ছাড়িয়া দিতে হয়, ইহার বেদনা যে কী সুতীব্র তাহা “যেতে নাহি দিব”, “প্রতীক্ষা” প্রভৃতি কবিতা পড়িলেই বুঝা যাইবে। তথাপি আমাদের দেশের প্রকৃতি অনুসরণ করিয়া কবি ইহাকে মায়ামোহ বলিয়া উড়াইয়া দিয়া বৈরাগ্যের মহিমা কীর্তন করিতে পারিলেন না। পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য ক্ষণিক বলিয়াই, স্নেহপ্রেমের সমস্ত সম্বন্ধ অনিত্য বলিয়াই কবির কাছে তাহা পরম রহস্যময়। ক্ষণিক না হইলে এমন আশ্চর্য হইতেই পারিত না। এই যে ক্ষণকালের জন্য চাহিয়া দেখা এ দেখার মধ্যে কি অপরিসীম করুণা! এ দেখায় অন্ত কোথায়? এ দেখা তাই বলে, ‘জনম অবধি হম রূপ নেহারনু নয়ন না তিরপিত ভেল।’
এই ক্ষণিক মেলামেশার মধ্যে যে একটি অপরূপ ব্যাকুলতা উদ্বেল হইয়া উঠে, লক্ষযুগ ধরিয়া হইলে এমনটি কি কখনো হইত? এ মেলামেশাও তাই “নিমেষে শতেক যুগ করি মানে।”
একদিন এই দেখা হয়ে যাবে শেষ,
পড়িবে নয়ন ’পরে অন্তিম নিমেষ।
পরদিনে এইমত পোহাইবে রাত,
জাগ্রত জগৎ-’পরে জাগিবে প্রভাত।···
সে কথা স্মরণ করি নিখিলের পানে
আমি আজি চেয়ে আছি উৎসুক নয়ানে।
যাহা-কিছু হেরি চোখে কিছু তুচ্ছ নয়;
সকলি দুর্লভ ব’লে আজি মনে হয় ।
দুর্লভ এ ধরণীর লেশতম স্থান,
দুর্লভ এ জগতের ব্যর্থতম প্রাণ ।
৪৯