বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেখিয়াছি, দেখি তেমনি এই আমি-অভিব্যক্তির একটি ধারাও সেই সঙ্গে সঙ্গে চলিয়া আসিয়াছে। এই ‘আমি’ যে বলে যে আমার সঙ্গে সমস্ত বিশ্বজগতের একেবারে নাড়ীর যোগ, আমরা একই ছন্দে বসানো, তাহার কারণ এই, যে জীব অভিব্যক্তির পর্যায়ে এই ‘আমি’ কত কি বস্তুর ভিতর দিয়া যাত্রা করিয়া আসিয়াছে— তাহার মধ্যে সেই সকল বিচিত্র জীবনের বিস্মৃত স্মৃতি নিশ্চয়ই কোনো-না-কোনো আকারে রহিয়াছে। যে জীবকোষ উদ্ভিদে সেই জীবকোষই যখন আমাদের শরীরে বুদ্ধিকে সঞ্চার করিতেছে, তখন এমন মনে করা কেন চলিবে না যে, আমারই জীবকোষরাজি বহু যুগের বহু বিচিত্র জীব-জীবনের বিস্মৃত স্মৃতিকে বহন করিতেছে। তাই তো আমি সমস্ত বিশ্বপ্রাণের আনন্দকে অনুভব করিতে পারি— তরুলতার পশুপক্ষীর জীবন-চেষ্টার আনন্দ আমায় স্পর্শ করে— ইহা তো কল্পনামাত্র নয়— আমাদের দেশের ঋষিকবিগণ ইহা উপলব্ধি করিয়াছেন, বিদেশেরও ওয়ার্ডস্বার্থ প্রভৃতি কবিগণ ইহা অনুভব করিয়াছেন— ইহা যদি কেবল একটা উড়ো কল্পনামাত্র হইত তবে অনুভূতি এমন ব্যাপ্ত দেশকালে কখনোই মিলিত না। এ কল্পনা নিশ্চয়ই কোনো অনাবিষ্কৃত সত্যকে আশ্রয় করিয়া আছে। এবং নিশ্চয়ই আমি-বোধ অথবা ব্যক্তিত্ব-বোধের মূল একেবারে বিশ্ব অভিব্যক্তির প্রারম্ভকালে গিয়া পৌঁছে, যেজন্য এই আমি-বোধের মধ্যে বিশ্ববোধ এমন সহজে এমন আনন্দে এমন প্রবলভাবে প্রকাশ পায়।

 প্রসঙ্গতঃ এখানে বলিয়া রাখি যে, ইউরোপে যাঁহারা মনস্তত্ত্ব ও জীবতত্ত্বকে একত্র করিয়া আলোচনা করিতেছেন এমন একদল পণ্ডিত বলেন যে আমার ব্যক্তিত্ব (personality) বিচিত্র ব্যক্তিত্বের সমষ্টি—এবং খুব সম্ভব আমাদের প্রত্যেক জীবকোষ (cell) বিচিত্র ভূতপূর্ব

৬২