একাধারে লেখনী চালনা করার মতো বিস্ময়কর ব্যাপার কোনো দেশের কোনো সাহিত্যিকের জীবনের ইতিহাসে দেখা গিয়াছে কি না সন্দেহ। দেশে কোনো বড় অনুষ্ঠান কি প্রতিষ্ঠান ছিল না এ কথা বলা অন্যায় হইবে। কন্গ্রেস কন্ফারেন্স প্রভৃতি ছিল। কিন্তু ইহাদের প্রতি তাঁহার অন্তরের শ্রদ্ধা বা অনুরাগ ছিল না, সেইজন্য ইহাদের মধ্যে নিজের স্থান করিয়া লইতে তিনি কখনোই আগ্রহ বোধ করেন নাই। প্রথমতঃ, দেশের ইতিহাসের সঙ্গে ইহাদের কোনো সম্বন্ধ নাই, পশ্চিমের ইতিহাসের অন্ধ অনুকরণের উপরেই ইহাদের প্রতিষ্ঠা; দ্বিতীয়তঃ, দেশের যথার্থ মঙ্গলকর্মের সঙ্গে ইহাদের কোনো যোগ ছিল না, কেবল ‘আবেদন আর নিবেদনের থালা বহে বহে নতশির’। সুতরাং এমন শূন্য ভিক্ষাবৃত্তির দ্বারা কর্মের অভাবের দীনতাকে দূর করা চলে না বলিয়াই কন্গ্রেস কন্ফারেন্স প্রভৃতির উপরে, সাধনাতে লিখিবার কালে, কবির সুতীব্র একটি অবজ্ঞা ছিল।
আমার তো কবির পূর্বজীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদের এই দুইটিই প্রধান কারণ বলিয়া মনে হয়— আর্টের জীবনে সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি মিলিতেছিল না, এবং একটি বড় ত্যাগের ক্ষেত্রে আপনাকে উৎসর্গের দ্বারা জীবনকে বড় করিয়া পাইবার তৃষ্ণা জাগিতেছিল।
আমি পূর্বেই বলিয়াছি যে ‘চিত্রা’র সময়ের দু-একটি চিঠির ভিতরেও এই কথার সাক্ষ্য পাই। একটা চিঠির কিছু অংশ এইখানে দিলাম:
‘হৃদয়ের প্রাত্যহিক পরিতৃপ্তিতে মানুষের কোনো ভালো হয় না, তাতে প্রচুর উপকরণের অপব্যয় হয়ে কেবল অল্প সুখ উৎপন্ন করে এবং কেবল আয়োজনেই সময় চলে যায়, উপভোগের অবসর থাকে না। কিন্তু ব্রতযাপনের মতো জীবন যাপন করলে দেখা যায় অল্প সুখও প্রচুর সুখ এবং সুখই একমাত্র সুখকর জিনিস নয়। চিত্তের দর্শন স্পর্শন শ্রবণ
৭৪