পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

से•नेिशन्न जक्र উঠে ; তখন আমাদের এই পুরাতন পৃথিবীর দিকে চাহিলে ইহাকে আর ধূলিপিও বলিয়া বোধ হয় না, নিশীথ নভোমগুলের নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে চাহিলে তাহারা শুদ্ধমাত্র অগ্নিস্ফুলিঙ্গরূপে প্রতীয়মান হয় না, তখন আমার অন্তরাত্মা হইতে আরম্ভ করিয়া ধূলিকণা, এই ভূমিতল হইতে আরম্ভ করিয়া নক্ষত্ৰলোক পৰ্য্যন্ত একটি শব্দ ধ্বনিহীন গাম্ভীর্ষ্যে উদগীত হইয়া উঠে—ওঁ,—একটি বাক্য শুনিতে পাই—অস্তি, তিনি আছেন —এবং সেই একটি কথার মধ্যেই সমস্ত জগৎচরাচরের, সমস্ত কাৰ্য্যকারণের সমস্ত অর্থ নিহত পাওয়া যায়। সেই মহান অস্তি শব্দকে কোনও আকারের দ্বারা মূৰ্ত্তি দ্বারা সহজ করা যায় কি ? এমন সহজ কথা কি আর কিছু আছে যে তিনি আছেন ? আমি আছি এ কথা যেমন জগতের সকল কথার অপেক্ষ সহজ তিনি আছেন এ কথা না বলিলে আমি আছি এ কথা যে আদ্যোপান্ত নিবর্থক মিথ্যা হইয়া যায় । আমার অস্তিত্ব বলিতেছে, আমার আত্মা বলিতেছে তিনি আছেন, সাকার মূৰ্ত্তি কি তদপেক্ষ সহজ সাক্ষ্য আর কিছু দিতে পারে ? ব্রহ্মের সেই বিশুদ্ধ ভাব কিরূপে মনন করিতে হইবে ? নৈনমূৰ্দ্ধং ন তিৰ্য্যঞ্চ ন মধ্যে পরিজগ্রভৎ ন তস্ত প্রতিমা অস্তি যস্ত নাম মহদ্যশ: | কি উৰ্দ্ধদেশ, কি তিৰ্য্যক, কি মধ্যদেশ কেহ ইহাকে গ্রহণ করিতে পারে না—তাহার প্রতিমা নাই, তাহার নাম মহদষশ ! প্রাচীন ভারতে সংসারবাসী জীবাত্মার লক্ষ্যস্থান এই পরমাত্মাকে বিদ্ধ করিবার মন্ত্র ছিল—ওঁ । প্ৰণবোধহুঃ শরোহাত্মা ব্ৰহ্মতল্লক্ষ্যমুচ্যতে । র্তাহার প্রতিমা ছিল না, কোন মূৰ্ত্তিকল্পনা ছিল না—পূৰ্ব্বতন পিতামহগণ র্তাহাকে মনন করিবার জন্য সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া একটিমাত্র শব্দ আশ্রয় করিয়াছিলেন । সে শব্দ যেমন সংক্ষিপ্ত, তেমনি পরিপূর্ণ, কোন বিশেষ অর্থ দ্বারা সীমাবদ্ধ নহে। সেই শব্দ চিত্তকে ব্যাপ্ত করিয়া দেয়, কোন বিশেষ আকার দ্বারা বাধা দেয় না ; সেই একটিমাত্র ওঁ শব্দের মহাসঙ্গীত জগৎসংসারের ব্রহ্মরন্ধ হইতে যেন ধ্বনিত হইয়া উঠিতে থাকে। ব্রহ্মের বিশুদ্ধ আদর্শ রক্ষা করিবার জন্য পিতামহগণ কিরূপ যত্নবান ছিলেন ইহা হইতেই তাহার প্রমাণ হইবে। চিস্তার যতপ্রকার চিহ্ন আছে তন্মধ্যে ভাষাই সৰ্ব্বাপেক্ষ চিন্তার অমুগামী । কিন্তু ভাষারও সীমা আছে, বিশেষ অর্থের দ্বারা সে আকারবদ্ধ—সুতরাং ভাষা আশ্রয় করিলে চিস্তাকে ভাষাগত অর্থের চারি প্রান্তের মধ্যে রুদ্ধ থাকিতে হয়।