পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇనశి রবীন্দ্র-রচনাবলী তুমি কী খেতে ভালোবাস, অমূল্য ? মায়ের কাছে থাকলে পৌষে পেট ভরে পিঠে খেতুম। ফিরে এসে তোমার হাতের তৈরি পিঠে খাব দিদিরানী । নিখিলেশের আত্মকথা রাত্রি তিনটের সময় জেগে উঠেই আমার হঠাৎ মনে হয়, ষে-জগতে আমি একদিন বাস করতুম সে যেন মরে ভূত হয়ে আমার এই বিছানা, এই ঘর, এই সব জিনিসপত্র দখল করে বসে আছে । আমি বেশ বুঝতে পারলুম মানুষ কেন পরিচিত লোকের ভূতকেও ভয় করে। চিরকালের জানা যখন একমুহূতে অজানা হয়ে উঠে তখন সে এক বিভীষিকা। জীবনের সমস্ত ব্যবহার যে সহজ স্রোতে চলছিল, আজ তাকে যখন এমন খাদে চালাতে হবে, ষে-খাদ এখনো কাট হয় নি তখন বিষম ধাঁধা লেগে যায় ; তখন নিজের স্বভাবকে বঁচিয়ে চলা শক্ত হয় ; তখন নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হয় আমিও বুঝি আর একজন কেউ । কিছুদিন থেকে বুঝতে পারছি সন্দীপের দলবল আমাদের অঞ্চলে উৎপাত শুরু করেছে। যদি আমার স্বভাবে স্থির থাকতুম তাহলে সন্দীপকে জোরের সঙ্গে বলতুম, এখান থেকে চলে যাও । কিন্তু গোলেমালে অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছি। আমার পথ আর সরল নেই। সন্দীপকে চলে যেতে বলার মধ্যে আমার একটা লজ্জা আসে । ওর সঙ্গে আর-একটা কথা এসে পড়ে ; তাতে নিজের কাছে ছোটো হয়ে যাই । দাম্পত্য আমার ভিতরের জিনিস—সে তো কেবল আমার গৃহস্থ-আশ্রম বা সংসারযাত্রা নয় । সে আমার জীবনের বিকাশ । সেইজতেই বাইরের দিক থেকে ওর উপরে একটুও জোর দিতে পারলুম ন-দিতে গেলেই মনে হয় আমার দেবতাকে অপমান করছি। এ-কথা কাউকে বোঝাতে পারব না। আমি হয়তো অদ্ভুত। সেই জন্তেই হয়তে ঠকসুম। কিন্তু আমার বাইরেকে ঠকা থেকে বাচাতে গিয়ে ভিতরকে ঠকাই কী করে ? যে-সত্য অস্তর থেকে বাইরেকে স্বষ্টি করে তোলে আমি সেই সত্যের দীক্ষা নিয়েছি। তাই আজ আমাকে বাইরের জাল এমন করে ছিন্ন করতে হল। আমার দেবতা আমাকে বাইরের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেবেন । হৃদয়ের রক্তপাত করে সেই মুক্তি আমি পাব। কিন্তু যখন পাব তখন অস্তরের রাজত্ব আমার হবে। সেই মুক্তির স্বাদ এখনই পাচ্ছি। থেকে থেকে অন্ধকারের ভিতর থেকে আমার