পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واة e আশা কাতর হইয়া কহিল, “আবার বারণ করিতেছ কেন । এবার একবার না গেলে তোমার সেই ভৎসনাটা আমার গায়ে লাগিয়ে থাকিবে । আমাকে দু-চার দিনের জন্যও পাঠাইয়া দাও।” মহেন্দ্র কহিল, "আচ্ছা।” বলিয়া আবার পাশ ফিরিয়া শুইল । কাশী যাইবার আগের দিন আশা বিনোদিনীর গলা জড়াইয়া কহিল, “ভাই বালি, আমার গা ছু ইয়া একটা কথা বল।” বিনোদিনী আশার গাল টিপিয়া ধরিয়া কহিল, “কী কথা, ভাই । তোমার অনুরোধ আমি রাখিব না ?” আশা । কে জানে ভাই, আজকাল তুমি কী রকম হইয়া গেছ । কোনোমতেই যেন আমার স্বামীর কাছে বাহির হইতে চাও না । বিনোদিনী । কেন চাই না, সে কি তুই জানিসনে, ভাই । সেদিন বিহারীবাবুকে মহেন্দ্রবাবু যে-কথা বলিলেন, সে কি তুই নিজের কানে শুনিস নাই। এ-সকল কথা যখন উঠিল তখন কি আর বাহির হওয়া উচিত— তুমিই বলো-না, ভাই বালি । ঠিক উচিত যে নহে, তাহা আশা বুঝিত । এ-সকল কথার লজ্জাকরতা যে কতদূর, তাহাও সে নিজের মন হইতেই সম্প্রতি বুঝিয়াছে। তবু বলিল, “কথা অমন কত উঠিয়া থাকে, সে-সব যদি না সহিতে পারিস তবে আর ভালোবাসা কিসের, ভাই । ও-কথা ভুলিতে হইবে।” ు বিনোদিনী । আচ্ছা ভাই, ভুলিব । আশা । আমি তো ভাই, কাল কাশী যাইব, আমার স্বামীর যাহাতে কোনো অসুবিধা না হয় তোমাকে সেইটে বিশেষ করিয়া দেখিতে হইবে । এখনকার মতো পালাইয়া বেড়াইলে চলিবে না। বিনোদিনী চুপ করিয়া রহিল। আশা বিনোদিনীর হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “মাথা থা ভাই বালি, এই কথাটা আমাকে দিতেই হইবে । বিনোদিনী কহিল, “আচ্ছা ।” २ (t একদিকে চন্দ্র অস্ত যায়, আর-এক দিকে স্বৰ্ষ উঠে। আশা চলিয়া গেল, কিন্তু মহেক্সের ভাগ্যে এখনো বিনোদিনীর দেখা নাই। মহেন্দ্র ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়, মাঝে মাঝে ছুতা করিয়া সময়ে-অসময়ে তাহার মার ঘরে আসিয়া উপস্থিত হয়, বিনোদিনী কেবলই ফাকি দিয়া পালায়, ধরা দেয় না ।