পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SGO রবীন্দ্র-রচনাবলী @क अनोळ९3 (शीळा नरे । সূৰ্যক্রমে পূর্ব দিকের সৌধশিখরমালার উপরে উঠিয়া পড়িল। হেমনলিনীর কাছে আজিকার এই নূতন-অভূদিত দিনটি এমনি শুষ্ক শূন্য, এমনি আশাহীন আনন্দহীন ঠেকিল যে, সে সেই ছাদের এক কোণে বসিয়া পড়িয়া দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া কীদিয়া উঠিল। আজ সমস্তদিন কেহই আসিবে না, চায়ের সময় কাহাকেও আশা করিবার নাই, পাশের বাড়িতে কেহ একজন আছে, এই কল্পনা করিবার সুখটুকু পর্যন্ত ঘুচিয়া গেছে। '(श्N ! (२N !' হেমনলিনী তাড়াতাড়ি উঠিয়া চোখ মুছিয়া ফেলিয়া সাড়া দিল, “কী বাবা ।” দেরি হইয়া গেছে।” অন্নদাবাবু উৎকণ্ঠায় রাত্রে ঘুমাইতে পারেন নাই, ভোরের দিকে ঘুমাইয়া পড়িয়ছিলেন । আলো চোখে লাগিতেই উঠিয়া পড়িয়া তাড়াতাড়ি মুখ ধুইয়া হেমনলিনীর খবর লইতে গেলেন। দেখিলেন ঘরে কেহ নাই। সকালে তাহাকে একলা বেড়াইতে দেখিয়া তঁহার বুকের মধ্যে আঘাত লাগিল। কহিলেন, “চলো মা, চা খাইবে চলো ।” চায়ের টেবিলে যোগেন্দ্রের সম্মুখে বসিয়া চা খাইবার ইচ্ছা হেমনলিনীর ছিল না। কিন্তু সে জনিত, কোনোরূপ নিয়মের অন্যথা তাহার ব্যাপকে পীড়া দেয় । তা ছাড়া, প্রত্যহ সে নিজের হাতে তাহার বাপের পেয়ালায় চা ঢালিয়া দেয়, এই সেবাটুকু হইতে সে নিজেকে বঞ্চিত করিতে চাহিল না। নীচে গিয়া ঘরে পৌঁছিবার পূর্বে যখন সে বাহির হইতে শুনিল যোগেন্দ্ৰ কাহার সঙ্গে কথা কহিতেছে, তখন তাহার বুক কঁপিয়া উঠিল— হঠাৎ মনে হইল, বুঝি রমেশ আসিয়াছে ! এত সকালে আর কে আসিবে ? কম্পিতপদে ঘরে ঢুকিয়া যেই দেখিল অক্ষয়, অমনি সে আর কিছুতেই আত্মসংবরণ করিতে পারিল না- তৎক্ষণাৎ ছুটিয়া বাহির হইয়া আসিল । w দ্বিতীয়বার অন্নদাবাবু যখন তাহাকে ঘরের মধ্যে লইয়া আসিলেন, তখন সে তাহার পিতার চৌকির পাশে ঘেষিয়া দাড়াইয়া নতমুখে তাহার চা প্ৰস্তুত করিয়া দিতে লাগিল । যোগেন্দ্ৰ হেমনলিনীর ব্যবহারে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছিল। হেম যে রমেশের জন্য এমন করিয়া শোক অনুভব করিবে, ইহা তাহার অসহ্য বোধ হইতেছিল। তাহার পরে যখন দেখিল, অন্নদাবাবু তাহার এই শোকের সঙ্গী হইয়াছেন এবং সেও যেন সংসারের আর-সকলের নিকট হইতে অন্নদাবাবুর মোহাচ্ছায়ায় আপনাকে রক্ষা করিতে চেষ্টা করিতেছে, তখন তাহার অধৈৰ্য আরো বাড়িয়া উঠিল ।-- “আমরা যেন সবাই অন্যায়কারী ! আমরা যে স্নেহের খাতিরেই কর্তব্যপালনে চেষ্টা করিতেছি, আমরাই যে যথার্থভাবে উহার মঙ্গলসাধনে প্রবৃত্ত, তাহার জন্য লেশমাত্র কৃতজ্ঞতা দূরে থাক, মনে মনে আমাদের দোষী করিতেছে। বাবার তো কোনো বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞান নাই। এখন সাত্মনা দিবার সময় নহে, এখন আঘাত দিবারই সময় । তাহা না করিয়া তিনি ক্রমাগতই অপ্ৰিয় সত্যকে উহার নিকট হইতে দূরে খেদাইয়া রাখিতেছেন।” যোগেন্দ্ৰ অন্নদাবাবুকে সম্বোধন করিয়া কহিল, “জান বাবা, কী হইয়াছে ? অন্নদাবাবু ত্ৰস্ত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “না, কী হইয়াছে ? যোগেন্দ্র । রমেশ কাল তাহার স্ত্রীকে লইয়া গোয়ালন্দ মেলে দেশে যাইতেছিল, অক্ষয়কে সেই গাড়িতে উঠিতে দেখিয়া দেশে না গিয়া আবার সে কলিকাতায় পালাইয়া আসিয়াছে। হেমনলিনীর হাত কঁপিয়া উঠিল, চা ঢালিতে চা পড়িয়া গেল। সে চৌকিতে বসিয়া পড়িল । যোগেন্দ্র তাহার মুখের দিকে একবার কটাক্ষপাত করিয়া বলিতে লাগিল, “পালাইবার কী দরকার ছিল, আমি তো কিছুই বুঝিতে পারি না। অক্ষয়ের কাছে তো পূর্বেই সমস্ত প্ৰকাশ হইয়া গিয়াছিল। একে তো তাহার পূর্বের ব্যবহার যথেষ্ট হেয়, তাহার পরে এই ভীরুতা, এই চােরের মতো ক্রমাগত