পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

घ्राँश्च विश्वांश्च ২৭৫ “এ-সব মস্ত কথা বলে আপনি ভোলাচ্ছেন আমাদের। আমরা আসলে বা, তার চেয়ে দাবি করছেন অনেক বেশি। এতটা সইবে না ।” “দাবির জোরেই দাবি সত্য হয়। তোমাদের আমরা বা বিশ্বাস করতে থাকব । তোমরা তাই হয়ে উঠবে। তোমরাও তেমনি করে আমাদের বিশ্বাস করে যাতে * আমাদের সাধনা সত্য হয়।” 醉 “আপনাকে কথা কওয়াতে ভালোবাসি কিন্তু এখন সে নয়। আমি নিজে কিছু বলতে ইচ্ছে করি।” • “আচ্ছা । তাহলে এখানে নয়, চলো ওই পিছনের ঘরটাতে।” পর্দাটানা আধা অন্ধকার ঘরে গেল ওরা । সেখানে একখানা পুরোনো টেবিল, তার দুধারে দুখান বেঞ্চ, দেয়ালে একটা বড়ো সাইজের ভারতবর্ষের ম্যাপ । “আপনি একটা অন্যায় করছেন—এ-কথা না বলে থাকতে পারলুম না ।” ইন্দ্রনাথকে এমন করে বলতে একমাত্র এলাই পারে। তবু তার পক্ষেও বলা সহজ নয়, তাই অস্বাভাবিক জোর লাগল গলায় । ইন্দ্রনাথকে ভালো দেখতে বললে সবট বলা হয় না। ওর চেহারায় আছে একটা কঠিন আকর্ষণশক্তি। যেন একটা বঞ্জ বাধা আছে সুদূরে ওর অন্তরে, তার গর্জন কানে আসে না, তার নিষ্ঠুর দীপ্তি মাঝে মাঝে ছুটে বেরিয়ে পড়ে । মুখের ভাবে মাজাঘষা ভদ্রতা, শান-দেওয়া ছুরির মতো। কড়া কথা বলতে বাধে না কিন্তু হেসে বলে ; গলার সুর রাগের বেগেও চড়ে না, রাগ প্রকাশ পায় হাসিতে। যতটুকু পরিচ্ছন্নতায় মর্যাদা রক্ষা হয় ততটুকু কখনো ভোলে না এবং অতিক্রমও করে না । চুল অনতিপরিমাণে ছাট, যত্ব না করলেও এলোমেলো হবার আশঙ্কা নেই। মুখের রঙ বাদামি, লালের আভাস দেওয়া । ভুরুর উপর দুইপাশে প্রশস্ত টান কপাল, দৃষ্টিতে কঠিন বুদ্ধির তীক্ষতা, ঠোঁটে অবিচলিত সংকল্প এবং প্রভৃত্বের গৌরব। অত্যন্ত দুঃসাধ্য রকমের দাবি সে অনায়াসে করতে পারে, জানে সেই দাবি সহজে অগ্রাহ হবে না। কেউ জানে তার বুদ্ধি অসামান্ত, কেউ জানে তার শক্তি অলৌকিক । তার পরে কারও আছে সীমাহীন শ্রদ্ধা, কারও আছে অকারণ ভয় । ইজনাৰ হাসিমুখে বললে, “কী অন্যায় ?” “আপনিউমাকে বিয়ে করতে হুকুম করেছেন, সে তো বিয়ে করতে চায় না।” “কে বললে চায় না ?” “সে নিজেই বলে।” \ * { “হয়তো লে নিজে ঠিক জানে না, কিংবা নিজে ঠিক বলে না।”