পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se e রবীন্দ্র-রচনাৰলী পাওয়া বলে ! যেন তোমার সেদিনকার বিরহ আজকের দিনের প্রতিহত মিলনের এক কড়াও দাম শোধ করতে পারে ।” “আজ তোমাকে কথায় পেয়েছে, অন্তু।” “কী বলছ ! আজি পেয়েছে । চিরকাল পেয়েছে। যখন আমার বয়স অল্প, ভালেকরে মুখ ফোটে নি, তখন সেই মেনের অন্ধকারের ভিতর থেকে কথা ফুটে ফুটে উঠছিল, কত উপমা কত তুলনা কত অসংলগ্ন বাণী। বয়স হল, সাহিত্যলোকে প্রবেশ করলুম, দেখলুম ইতিহাসের পথে পথে রাজ্যসাম্রাজ্যের ভগ্নস্তুপ, দেখলুম বীরের রণসঙ্গ পড়ে আছে ভেঙে, বিদীর্ণ জয়স্তম্ভের ফাটলে উঠেছে অশখগাছ ; বহু শতাব্দীর বহু প্রয়ার্স ধুলার ভূপে স্তব্ধ। কালের সেই আবর্জনারাশির সর্বোচ্চে দেখলুম অটল বাণীর সিংহাসন। সেই সিংহাসনের পায়ের কাছে যুগযুগান্তরের তরঙ্গ পড়ছে লুটিয়ে লুটিয়ে । কতদিন কল্পনা করেছি সেই সিংহাসনের সোনার স্তম্ভে অলংকার রচনা করবার ভার নিয়ে । এসেছি আমিও । তোমার অন্তু চিরদিন কথায়-পাওয়া মানুষ। তাকে কোনোদিন ঠিকমতো চিনবে সে-আশা আর রইল না—তাকে কি না ভরতি করে নিলে দলের শতরঞ্চ খেলায় বোড়ের মধ্যে ।” এল চৌকি থেকে নেমে পড়ে অতীনের পায়ের উপর মাথা রাখলে। অতীন তাকে টেনে তুলে পাশে বসালে । বললে, “তোমার এই ছিপছিপে দেহখানিকে কথা দিয়ে দিয়েই মনে মনে সাজিয়েছি, তুমি আমার সঞ্চারিণী পল্পবিনী লতা, তুমি আমার মুখমিতি বা দু:খমিতি বা । আমার চারিদিকে আছে অদৃপ্ত আবরণ, বাণীর আবরণ, সাহিত্যের অমরাবতী থেকে নেমে এসে ভিড় ঠেকিয়ে রাখে তারা । আমি চিরস্বতন্ত্ৰ, সে-কথা জানেন তোমাদের মাস্টারমশায়, তবু আমাকে বিশ্বাস করেন কেন ?” “সেইজন্তেই বিশ্বাস করেন। সবার সঙ্গে মিলতে হলে সবার মধ্যে নাবতে হয় তোমাকে । তুমি কিছুতেই নাবতে পার না । তোমার পরে আমার বিশ্বাস সেইজন্তেই। কোনো মেয়ে কোনো পুরুষকে এত বিশ্বাস করতে পারে নি। ভূমি যদি সাধারণ পুরুষ হতে তাহলে সাধারণ মেয়ের মতোই আমি তোমাকে ভয় করতুম । নির্ভয় তোমার সঙ্গ ।” 鸭 “ধিক সেই নির্ভয়কে । ভয় করলেই পুরুষকে উপলদ্ধি করতে। দেশের জন্তে দুঃসাহস দাবি কর, তোমার মতো মহীয়সীর জন্তে করবে না কেন ? কাপুরুষ আমি। অসম্মতির নিষেধ ভেদ করে কেন তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারি নি বহুপূর্বে যখন সময় হাতে ছিল ? ভদ্রতা ! ভালোবাসা তো বর্বর 1 তার বর্বরতা পাথর ঠেলে পখ করবার জন্ধে । পাগলাবোরা সে, ভজশহরের পোৰ-মান কলের জল নয় ।”