পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্রহ্মচর্য ব্রত আমার কাছেই শিক্ষা যে ওর । নইলে দেখতে অন্যরকম হত । আজকালকার দিনে সংযমেরি কঠোর সাধন বিনে সমাজেতে রয় না কোনো বাধ, মেয়েরা তাই শিখছে কেবল বিবিয়ানার ছাদ ।” স্ত্রীর মরণের পরে যবে সবেমাত্র এগারো মাস হবে, গুজব গেল শোনা এই বাড়িতে ঘটক করে আনাগোনা । প্রথম শুনে মঞ্জুলিকার হয় নিকো বিশ্বাস, তার পরে সব রকম দেখে ছাড়লে সে নিশ্বাস । ব্যস্ত সবাই, কেমনতরো ভাব আসছে ঘরে নানারকম বিলিতি আসবাব । দেখলে বাপের নতুন করে সাজসজ্জা শুরু, হঠাৎ কালো ভ্রমরকৃষ্ণ ভুরু, পার্কাচুল সব কখন হল কটা, চাদরেতে যখন-তখন গন্ধ মাথার ঘট । মার কথা আজ মঞ্জলিকার পড়ল মনে বুকভাঙা এক বিষম ব্যথার সনে । হ’ক না মৃত্যু, তবু এ-বাড়ির এই হাওয়ার সঙ্গে বিরহ তার ঘটে নাই তো কহু । কল্যাণী সেই মূর্তিখানি সুধামাখা এ সংসারের মর্মে ছিল আঁকা ; সাধবীর সেই সাধনপুণ্য ছিল ঘরের মাঝে, তারি পরশ ছিল সকল কাজে । এ সংসারে তার হবে আজ পরম মৃত্যু, বিষম অপমান— সেই ভেবে যে মঞ্জলিকার ভেঙে পড়ল প্রাণ ।