পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Rత রবীন্দ্র-রচনাবলী ততঃ কিম্। আহারসংগ্রহ ও আত্মরক্ষা করিয়া বাচিয়া থাকিতে শিখিলেই পশুপাখির শেখা সম্পূর্ণ হয় ; সে জীবলীলা সম্পন্ন করিবার জন্যই প্রস্তুত হয়। মানুষ গুধু জীব নহে, মানুষ সামাজিক জীব। সুতরাং জীবনধারণ করা এবং সমাজের যোগ্য হওয়া, এই উভয়ের জন্যই মানুষকে প্রস্তুত হইতে হয়। কিন্তু সামাজিক জীব বলিলেই মানুষের সব কথা ফুরায় না । মানুষকে আত্মারূপে দেখিলে সমাজে তাহার অস্ত পাওয়া ষায় না । যাহারা মানুষকে সেইভাবে দেখিয়াছে, তাহারা বলিয়াছে, আত্মানং বিদ্ধি-আত্মাকে জানো । আত্মাকে উপলব্ধি করাই তাহারা মানুষের চরমসিদ্ধি বলিয়া গণ্য করিয়াছে । নিচের ধাপ বরাবর উপরের ধাপেরই অমুগত। সামাজিক জীবের পক্ষে শুদ্ধমাত্র জীবলীলা সমাজধর্মের অন্তবর্তী। ক্ষুধা পাইলেই খাওয়া জীবের প্রবৃত্তি—কিন্তু সামাজিক জীবকে সেই আদিমপ্রবৃত্তি পর্ব করিয়া চলিতে হয় । সমাজের দিকে তাকাইয়া অনেক সময় ক্ষুধাতৃষ্ণাকে উপেক্ষা করাই আমরা ধর্ম বলি। এমন কি, সমাজের জন্ত প্রাণ দেওয়া অর্থাং জীবধর্ম ত্যাগ করাও শ্রেয় বলিয়া গণ্য হয় । তবেই দেখা যাইতেছে, জীবধর্মকে সংযত করিয়া সমাজধর্মের অমুকুল করাই সামাজিক জীবের শিক্ষার প্রধান কাজ । কিন্তু মানুষের সত্যকে যাহারা এইখানেই সীমাবদ্ধ না করিয়া পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করিতে ইচ্ছা করে, তাহারা জীবধর্ম ও সমাজধর্ম উভয়কেই সেই আত্ম-উপলব্ধির অনুগত করিবার সাধনাকেই শিক্ষা বলিয়া জানে। এক কথায় মানবাত্মার মুক্তিই তাহাজের কাছে মানবজীবনের চরমলক্ষ্য—জীবনধারণ ও সমাজরক্ষার সমস্ত লক্ষ্যই ইহার অনুবর্তী । তবেই দেখা যাইতেছে, মানুষ বলিতে যে যেমন বুঝিয়াছে, সে সেই অনুসারেই মানুষের শিক্ষাপ্রণালী প্রবর্তন করিতে চাহিয়াছে—কারণ, মাহুষ করিয়া তোলাই শিক্ষা । আমরা প্রাচীন সংহিতায় ছাত্রশিক্ষার ষে আদর্শ দেখিতে পাই, তাহ কন্থে হইতে এবং কতদূর পর্যন্ত দেশে চলিয়াছিল, তাহার ঐতিহাসিক বিচার করিতে আমি অক্ষম। অন্তত এইটুকু নি:সংশয়ে বলা বাইতে পারে, র্যাহার সমাজের নিয়ন্ত ছিলেন তাহাজের মনে শিক্ষার উদ্বেগু কী ছিল ; তাছার মানুষকে কী বলিয়া জানিতেন এবং সেই মাছুষকে গড়িয়া তুলিবার জন্য কোন উপায়কে সকলের চেয়ে উপযুক্ত বলিয়া মনে করিয়াছিলেন। &