পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 8ఆs. “আমি” না ছাড়লেও প্ৰেম নেই। সেইজন্তে ভগবান সপ্ত৭ কি নিগুণ সে সমস্ত তর্কের কথা কেবল তর্কের ক্ষেত্রেই চলে—সে তর্ক তাকে স্পর্শও করতে পারে না । পাশ্চাত্য ধর্মতত্বে বলে আমাদের অনন্ত উন্নতি—আমরা ক্রমাগতই তার দিকে যাই কোনো কালে তার কাছে যাই নে। আমাদের উপনিষৎ বলেছেন আমরা তার কাছে যেতেও পারি নে আবার তার কাছে যেতেও পারি তাকে পাইও না, তাকে পাইও । যতোবাচো নিবর্তস্তে অপ্রাপ্য মনসাসহ—আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কুতশন । এমন অদ্ভূত বিরুদ্ধ কথা একই শ্লোকের দুই চরণের মধ্যে তো এমন সুস্পষ্ট করে আর কোথাও শোনা যায় নি। শুধু বাক্য ফেরে না মনও র্তাকে না পেয়ে ফিরে আসে - এ একেবারে সাফ জবাব । অথচ সেই ত্রন্ধের আনন্দকে যিনি জেনেছেন তিনি আর কিছু থেকে ভয় পান না। তবেই তে র্যাকে একেবারেই জানা যায় না তাকে এমনি জানা যায় যে আর কিছু থেকেই ভয় থাকে না । সেই জানাটা কিসের জানা ? আনন্দের জানা । প্রেমের জানা । এ হচ্ছে সমস্ত জানাকে লঙ্ঘন করে জানা । প্রেমের মধ্যেই না জানার সঙ্গে জানার ঐকাস্তিক বিরোধ নেই। স্ত্রী তার স্বামীকে জ্ঞানের পরিচয়ে সকল দিক থেকে সম্পূর্ণ না জানতে পারে কিন্তু প্রেমের জানায় আনন্দের জানায় এমন করে জানতে পারে যে, কোনো জ্ঞানী তেমন করে জানতে পারে না । প্রেমের ভিতরকার এই এক অদ্ভূত রহস্ত যে, যেখানে একদিকে কিছুই জানি নে সেখানে অন্যদিকে সম্পূর্ণ জানি । প্রেমেতেই অসীম সীমার মধ্যে ধরা দিচ্ছেন এবং সীমা অসীমকে আলিঙ্গন করছে তর্কের দ্বারা এর কোনো মীমাংসা করবার জো নেই। ধর্মশান্ত্রে তো দেখা যায় মুক্তি এবং বন্ধনে এমন বিরুদ্ধ সম্বন্ধ যে, কেউ কাউকে রেয়াত করে না । বন্ধনকে নিঃশেষে নিকাশ করে দিয়ে মুক্তিলাভ করতে হবে এই আমাদের প্রতি উপদেশ । স্বাধীনতা জিনিসটা যেন একটা চূড়ান্ত জিনিস পাশ্চাত্য শাস্ত্রেও এই সংস্কার আমাদের মনে বদ্ধমূল করে দিয়েছে। কিন্তু একটি ক্ষেত্র আছে যেখানে অধীনতা এবং স্বাধীনতা ঠিক সমান গোঁৱব ভোগ করে একঞ্চ জামাদের জুললে চলবে না। সে হচ্ছে প্রেমে। সেখানে অধীনতা স্বাধীনতার কাছে এক চুলও মাখা হেট করে না। প্রেমই সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং প্রেমই সম্পূর্ণ অধীন। ঈশ্বর তো কেবলমাত্র মুক্ত নন তাহলে তে তিনি একেবারে নিক্রিয় হতেন। তিনি নিজেকে বেঁধেছেন। না যদি বাধতেন তাহলে স্বটিই হত না এবং স্বষ্টির মধ্যে কোনো নিয়ম কোনো তাৎপর্বই দেখা যেত না। তার ষে আনন্দরূপ,