পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q 88 রবীন্দ্র-রচনাবলী o আর-একদিকে তার বাহিরের সংবাধ। এই দুইয়ে মিলে তার সমগ্র চিত্রের বৈশিষ্ট্য। এলা ও অতীনের ভালোবাসার সেই বৈশিষ্ট্য এই গল্পে মূর্তিমান করতে চেয়েছি। তাদের স্বভাবের মূলধনটাও দেখাতে হয়েছে, সেইসঙ্গেই দেখাতে হয়েছে যে-অবস্থার সঙ্গে তাদের শেষ পর্যন্ত কারবার করতে হল তারও বিবরণ। বাইরের এই অবস্থা যেটা আমাদের রাষ্ট্রপ্রচেষ্টার নানা সংঘট্টনে তৈরি, সেটার অনেকখানি অগত্য আমার নিজের দৃষ্টিতে দেখা, ও তার কিছু কিছু আভাস আমার নিজের অভিজ্ঞতাকে স্পর্শ করেছে । তার সংবেদন ভিন্ন লোকের কাছে ভিন্ন রকমের হওয়ারই কথা, তার সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতারও পার্থক্য আছে । কিন্তু গল্পটাকে যদি সাহিত্যের বিষয় বলে মানতে হয় তাহলে এ নিয়ে তর্ক অনাবশ্যক, গল্পের ভূমিকারূপে আমার ভূমিকাকেই স্বীকার করে নিতে হবে । • খ্ৰীস্টানও যদি কুমারসম্ভব পড়তে চায় তাহলে কালিদাসের বর্ণিত হরপার্বতীর আখ্যানকেই তার সত্য বলে মান চাই, তা নিয়ে ধর্মতত্ত্বঘটিত তর্ক চলবে না । এই পৌরাণিক আখ্যানে সাংখ্যতত্ত্ব বিশুদ্ধভাবে নিরূপিত হয়েছে কিনা সেপ্রশ্ন উত্তর দেবার যোগ্যই নয়, আসল কথাটা এই যে, এই আধ্যানের ভূমিকায় হরপার্বতীর প্রেম ও মিলনটাই মুখ্যভাবে গোচর। এমন কি কুমারের জন্মবিবরণকেও কালিদাস উপেক্ষা করেছেন । যদি কোনো পাঠক বলেন আমার গল্পের ভূমিকা কোনো কোনো অংশে বা অনেক অংশে আমার স্বকপোলকল্পিত তাহলে গল্প-লিপিয়ে হিসাবে সে অভিযোগ মেনে নিলেও ক্ষতি হবে না । ইন্দ্রনাথ দ্বারা চালিত প্রচেষ্টার কী পরিণাম হল, কী হল বটুর বা কানাইয়ের সে সংবাদটাকে কোনো স্থান দেওয়া হয় নি, উপসংহারে একমাত্র ব্যঞ্জনা অস্তু-এলার প্রেমের, এই উপসংহারের দ্বারা ওই প্রেমের রূপটিকেই সম্পূর্ণতা দেওয়া হল। গল্পের উপক্রমণিকায় উপাধ্যায়ের কথাটা কেন এল এ-প্রশ্ন নিশ্চয়ই জিজ্ঞাস্ত । অতীনের চরিত্রে দুটি ট্র্যাজেডি ঘটেছে, এক সে এলাকে পেলে না, আর সে নিজের স্বভাব থেকে ভ্ৰষ্ট হয়েছে। এই শেষোক্ত ব্যাপারটি স্বভাববিশেষে মনস্তত্ব হিসাবে বাস্তব হতে পারে তারই সাক্ষ্য উপস্থিত করার লোভ সংবরণ করতে পারি নি। ভয় ছিল পাছে কেউ ভাবে যে, এই সম্ভাবনাটি কবিজাতীয় বিশেষ মত বা মেজাজ দিয়ে গড়। এর বাস্তবতা সম্বন্ধে অসন্দিগ্ধ হলে এর বেদনার তীব্রত পাঠকের মনে প্রবল হতে পারে এই আশা করেছিলুম। ত৷