পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বামী কহিলেন, “তুমি এ কী বলিতেছ। তোমাকে সংসার ছাড়িতে কে বলিল ।” 醫 আমি বলিলাম, “গুরুঠাকুর।” স্বামী হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন ; “গুরুঠাকুর! এমন কথা তিনি কখন বলিলেন।” আমি বলিলাম, “আজ সকালে যখন স্নান করিয়া ফিরিতেছিলাম তাহার সঙ্গে দেখা হইয়াছিল। তখনি বলিলেন।” স্বামীর কণ্ঠ কঁাপিয়া গেল। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এমন আদেশ কেন করিলেন।” আমি বলিলাম, “জানি না। তাছাকে জিজ্ঞাসা করিয়ো, পারেন তো তিনিই বুঝাইয়া দিবেন।” স্বামী বলিলেন, "সংসারে থাকিয়াও তো সংসার ত্যাগ করা যায়, আমি সেই কথা গুরুকে বুঝাইয়া বলিব ।” আমি বলিলাম, “হয়তো গুরু বুঝিতে পারেন, কিন্তু আমার মন বুঝিবে না। আমার ংসার করা আজ হইতে ঘুচিল ।” স্বামী চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। আকাশ যখন ফরশা হইল তিনি বলিলেন, "চলো-না, দুজনে একবার তার কাছেই যাই ।” আমি হাত জোড় করিয়া বলিলাম, “তার সঙ্গে আর আমার দেখা হইবে না।” তিনি আমার মুখের দিকে চাহিলেন, আমি মুখ নামাইলাম। তিনি আর কোনো কথা বলিলেন না। আমি জানি, আমার মনটা তিনি একরকম করিয়া দেখিয়া লইলেন। পৃথিবীতে দুটি মানুষ আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসিয়াছিল, আমার ছেলে আর আমার স্বামী। সে ভালোবাসা আমার নারায়ণ, তাই সে মিথ্যা সহিতে পারিল না। একটি আমাকে ছাড়িয়া গেল, একটিকে আমি ছাড়িলাম। এখন সত্যকে খুজিতেছি, আর ফাকি নয় । এই বলিয়া সে গড় করিয়া প্রণাম করিল। আষাঢ় ১৩২১