পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা లR(t So দ্বিতীয় সাধনা তপন অমিত ভিজে চৌকির উপরে এক তাড়া খবরের কাগজ চাপিয়ে তার উপর বসেছে। টেবিলে এক দিন্তে ফুলস্কাপ কাগজ নিয়ে তার চলছে লেখা। সেই সময়েই সে তার বিখ্যাত আত্মজীবনী গুরু করেছিল । কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলে, সেই সময়েই তার জীবনটা অকস্মাং তার নিজের কাছে দেখা দিয়েছিল নানা রঙে, বাদলের পরদিনকার সকালবেলায় শিলঙ পাহাড়ের মতো—সেদিন নিজের অস্তিত্বের একটা মূল্য সে পেয়েছিল, সে-কথাটা প্রকাশ না করে সে থাকবে কী করে । অমিত বলে, মানুষের মৃত্যুর পরে তার জীবনী লেখা হয়, তার কারণ, একদিকে সংসারে সে মরে আর-একদিকে মানুষের মনে সে নিবিড় করে বেঁচে ওঠে । অমিতর ভাবধান এই যে, শিলঙে সে যখন ছিল তখন একদিকে সে মরেছিল, তার অতীতটা গিয়েছিল মরীচিকার মতো মিলিয়ে, তেমনি আর-একদিকে সে উঠেছিল তীব্র করে বেঁচে ; পিছনের অন্ধকারের উপরে উজ্জল আলোর ছবি প্রকাশ পেয়েছে । এই প্রকাশের পবরটা রেখে যাওয়া চাই । কেননা পৃথিবীতে খুব অল্প লোকের ভাগ্যে এটা ঘটতে পারে, তার জন্ম থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত একটা প্রদোষচ্ছায়ার মধ্যেই কাটিয়ে যায়, যে-বাদুড় গুহার মধ্যে বাসা করেছে তারই মতো । তপন অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে, ঝ'ড়ো হাওয়াটা গেছে থেমে, মেঘ এসেছে পাতলা হয়ে । অমিত চৌকি ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললে, “এ কী অন্যায় মাসিমা ।” “কেন, বাবা, কী করেছি ?” “আমি যে একেবারে অপ্রস্তুত । শ্ৰীমতী লাবণ্য কী ভাববেন ?” "শ্ৰীমতী লাবণ্যকে একটু ভাবতে দেওয়াই তো দরকার । যা জানবার সবটাই যে জানা ভালো । এতে ঐযুক্ত আমিতের এত আশঙ্কা কেন ?" “শ্ৰীযুক্তের যা ঐশ্বৰ সেইটেই শ্ৰীমতীর কাছে জানাবার। আর শ্ৰীহীনের যা দৈন্য সেইটে জানাবার জন্তেই আছ তুমি, আমার মাসিমা ।” “এমন ভেদবুদ্ধি কেন, বাছা ?” "নিজের গরজেই । ঐশ্বর্য দিয়েই ঐশ্বর্য দাবি করতে হয়, আর অভাব দিয়ে চাই আশীৰ্বাদ । মানবসভ্যতায় লাবণ্য দেবীরা জাগিয়েছেন ঐশ্বর্য, আর মাসিমার এনেছেন আশীৰ্বাদ ।”