পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳԵ রবীন্দ্র-রচনাবলী আছে সে-কথাও মানিতে হুইবে । আমাদের শাসনকর্তাদের জীবনযাত্র আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়সাধ্য। র্তাহাদের খাওয়াপরা বিলাসবিহার, তাহাদের সমূত্রের এপার ওপার দুই পারের রসদ জোগানে, উহাদের এখানকার কর্মাবসানে বিলাতি অবকাশের আরামের আয়োজন এ-সমস্ত আমাদিগকে করিতে হইতেছে। দেখিতে দেখিতে র্তাহাদের বিলাসের মাত্রা কেবলই অত্যন্ত বাড়িয়া চলিয়াছে তাহা সকলেই অবগত আছেন । এই সমস্ত বিলাসের খরচ জোগাইবার ভার এমন ভারতবর্ষের, যাহার দুইবেলার অন্ন পুরা পরিমাণে জোটে না । এমন অবস্থায় যাহারা বিলাসী প্রবলপক্ষ, তাহাদের অন্ত:করণ নির্মম হইয়া উঠিতে বাধ্য। যদি তাহাদিগকে কেহু বলে ওই দেখো এই হতভাগাণ্ডলা থাইতে পায় না, তাহারা প্রমাণ করিতে ব্যস্ত হয় ষে ইহাদের পক্ষে এইরূপ খাওয়াই স্বাভাবিক এবং ইহাই যথেষ্ট । ষে-সব কেরানি পনেরো-কুড়ি টাকায় ভূতের খাটুনি থাটিয়া মরিতেছে মোটা মাহিনার বড়ো সাহেব ইলেকটিক পাথার নিচে বসিয়া একবার চিন্তা করিতেও চেষ্টা করে না যে, কেমন করিয়া পরিবারের ভার লইয়া ইহাদের দিন চলিতেছে।. তাহারা মনকে শাস্ত সুস্থির রাখিতে চায় নতুবা তাহদের পরিপাকের ব্যাঘাত এবং যকৃতের বিরুতি ঘটে । এ-কথা যখন নিশ্চিত যে অল্পে তাহাদের চলে না, এবং ভারতবর্ষের উপরেই তাহদের নির্ভর তখন তাহাদের তুলনায় তাহাদের চারিদিকের লোকে কী পায় পরে কেমন করিয়া দিন কাটায় তাহ নিঃস্বার্থভাবে তাহারা বিচার কপনোই করিতে পারে না । বিশেষত এক-আধজন লোক তো নয়—কেবল তো একটি রাজা নয় একজন সম্রাট নয়একেবারে একটি সমগ্র জাতির বাবুয়ানার সম্বল এই ভারতবর্ধকে জোগাইতে হইবে । যাহারা বহুদূরে থাকিয়া রাজার হালে বাচিয়া থাকিতে চায় তাহাদের জন্ত আত্মীয়তাসম্পর্কশূন্ত অপরজাতিকে অন্নবস্ত্র সমস্ত সংকীর্ণ করিয়া আনিতে হইতেছে এই যে নিষ্ঠুর অসামঞ্জস্ত ইহা যে প্রতিদিন বাড়িয়াই চলিল তাহা কেবল তাহারাই অস্বীকার করিতেছেন যাহাদের পক্ষে আরাম অত্যন্ত আবশুক হুইয়া উঠিয়াছে । অতএব, একপক্ষে বড়ো বড়ো বেতন, মোট পেনশন এবং লম্বা চাল, অন্তপক্ষে নিতান্ত ক্লেশে আধপেটা আহারে সংসারযাত্র নির্বাহ –অবস্থার এই অসংগতি একেবারে গায়ে গায়ে সংলগ্ন। শুধু অল্পবস্ত্রের হীনতা নহে, আমাদের তরফে সম্মানে লাম্বব এত অত্যন্ত অধিক, পরস্পরের মূল্যের তারতম্য এত অতিমাত্র, যে, আইনের পক্ষেও পক্ষপাত বাচাইয়া চলা অসাধ্য ; এমন স্থলে যত দিন যাইতেছে ভারতবর্ষের বক্ষের উপর বিদেশীর ভার ততই গুরুতর হইতেছে, উভয়পক্ষের মধ্যেকার অসাম্য নিরতিশয় অপরিমিত হইয় উঠতেছে ইহা আজ আর কাহারও বৃকিতে বাকি নাই।