পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(* 8ა) রবীন্দ্র-রচনাবলী সভ্যতার শততত্ত্বনির্মিত স্বল্প সুদৃঢ় জাল ছিন্ন করিয়া ফেলিয়া আদিম আরণ্য প্রকৃতির বর্বরতার মধ্যে ঝাপ দিয়া পড়িতে ইচ্ছা করে। অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানগণ ভারতবর্ষে আসিয়া যে এক সুতীব্র ক্ষমতা-মদিরার আস্বাদন পায় তাহাতে এই প্রচণ্ড মত্ততার স্বষ্টি করিতে পারে। এই প্রেমহীন কঠিন ক্ষমতাদম্ভ প্রতিভাসম্পন্ন পুরুষের লেখনীতে অকৃত্রিম অসংকোচ পৌরুষ-আকারে একপ্রকার ভীষণ রমণীয়তা ধারণ করে তাহ ইংরেজের পক্ষে সাহিত্য কিন্তু আমাদের পক্ষে মৃত্যুর নিদান। দ্বিতীয় কথা এই, আজকালকার উপন্যাসে লেখকের প্রাচ্য প্রকৃতিকে পাশ্চাত্যদেশের নিকট যতটা রহস্যময় বলিয়া বর্ণনা করেন তাহার অনেকটা কাল্পনিক । আমাদের পরস্পরের মধ্যে সহস্ৰ যোগ আছে। অস্তরের সাদৃত অনেক সময় বাহ বৈসদৃতে আচ্ছন্ন হইয়া থাকে মাত্র। আধুনিক লেখকগণ সেই বাহ বৈসদৃষ্ঠাগুলির নূতনত্বকে পাঠকদের মনোরঞ্জনার্থে রঞ্জিত অতিরঞ্জিত করিয়া তুলিতে থাকেন এবং সুগভীর সাদৃশুগুলি উদ্ধার করিবার চেষ্টাও পান না ক্ষমতাও রাপেন না। আমার এত কথা বলিবার তাংপর্য এই যে, কেবল ভারতবর্ষে নহে ইংলণ্ডেও ক্রমে ক্রমে এই ধারণা বিস্তৃত হইতেছে যে, যুরোপের নীতি কেবল যুরোপের জন্য । ভারতবর্ষীয়ের এতই স্বতন্ত্র জাতি যে, সভ্যনীতি তাহাদের পক্ষে সম্পূর্ণ উপযোগী নহে । এরূপ অবস্থায় আমাদের ন্যায়ান্যায়বোধ প্রবল হইয়া উঠিলে ইংরেজের রাজনীতি বিপথগামী হইতে পারিবে না । ইংরেজ যখন জানিলে সমস্ত ভারতবর্ষ তাহার কাজের বিচার করিতেছে তখন ভারতবর্ষকে সে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া কাজ করিতে পারিবে না। সম্প্রতি তাহার লক্ষণ কিছু কিছু দেখা যাইতেছে । ইংরেজের কোনো অন্যায় দেপিলে ভারতবর্ষ আপন দুর্বলকণ্ঠে সভ্যতা ও নীতির দোহাই পাড়িতে থাকে । সেজন্য ইংরেজ রাগ করে বটে কিন্তু তাহাকে কিঞ্চিং সতর্ক থাকিতেও হয় । তথাপি এখনও সম্পূর্ণ ফল ফলে নাই। আমাদের সম্বন্ধে সকল সময়ে সকল অবস্থায় নীতি মানিয়া চলাকে ইংরেজ দুর্বলতা স্বীকার বলিয়া দেপে । আমাদের প্রতি অপরাধ করিয়া তাহদের কেহ ন্যায়বিচারে দ গুনীয় হয় ইহা তাহারা লজ্জাজনক ও ক্ষতিজনক বলিয়া জ্ঞান করেন । র্তাহারা মনে করেন ভারতবর্ষীয়ের নিকট ইহাতে ইংরেজের জোর কমিয়া যায় । রাজপুরুষদিগের মনের ভাব ঠিক করিয়া নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে অসাধ্য, কিন্তু বোধ করি রাউচি সাহেবের অসময়ে পদোন্নতি উপরি-উক্ত পলিসিবশত। বিশেষত যখন দেখা যায় এমন ঘটনা বারংবার ঘটিয়াছে, তখন সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। গবর্মেন্ট যেন নীরবে বলিতেছেন যে, তোমাদিগের কাহাকেও অন্যায় উৎপীড়ন ও অপমান করিয়া