পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓቫቑg«ጳPጂ V8 V এই বলিয়া তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া তাহার মাথায় পিঠে হাত বুলাইয়া কোনোমতে আপন অঞ্চল ছাড়াইয়া তাড়াতাড়ি সে চলিয়া গেল ; আমনি সাহেব নীলমণিকে বাম হস্তের দ্বারা বেষ্টন করিয়া ধরিলেন, সে “দিদি গো, দিদি” করিয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্ৰন্দন করিতে লাগিল । শশী একবার ফিরিয়া চাহিয়া দূর হইতে প্রসারিত দক্ষিণ হস্তে তাহার প্রতি নীরবে সাস্তুনা প্রেরণ করিয়া বিদীর্ণ হৃদয়ে চলিয়া গেল । আবার সেই বহুকালের চিরপরিচিত পুরাতন ঘরে স্বামীস্ট্রীর মিলন হইল। প্ৰজাপতির নির্বন্ধ ! কিন্তু, এ মিলন অধিকদিন স্থায়ী হইল না । কারণ, ইহার অনতিকাল পরেই একদিন প্ৰাতঃকালে গ্রামবাসীগণ সংবাদ পাইল যে, রাত্রে শশী ওলাউঠা রোগে আক্রান্ত হইয়া মরিয়াছে এবং রাত্রেই তাহার দহক্রিয়া সম্পন্ন হইয়া গেছে । কেহ এ সম্বন্ধে কোনো কথা বলিল না । কেবল সেই প্ৰতিবেশিনী তারা মাঝে মাঝে গর্জন করিয়া উঠিতে চাহিত, সকলে “চুপ চুপা করিয়া তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দিত । বিদায়কালে শশী ভাইকে কথা দিয়া গিয়াছিল, আবার দেখা হইবে । সে কথা কোনখানে রক্ষা হইয়াছে জানি না । Oba » Soo ) মানভঞ্জন প্রথম পরিচ্ছেদ রমানাথ শীলের ত্রিতল অট্টালিকায় সর্বোচ্চ তলের ঘরে গোপীনাথ শীলের স্ত্রী গিরিবালা বাস করে । শয়নকক্ষের দক্ষিণ দ্বারের সম্মুখে ফুলের টবে গুটিকতক বেলফুল এবং গোলাপফুলের গাছ ; ছাতটি উচ্চ প্রাচীর দিয়া ঘেরা— বহিৰ্দশ্য দেখিবার জন্য প্রাচীরের মাঝে মাঝে একটি করিয়া ইট ফাক দেওয়া আছে। শোবার ঘরে নানা বেশ এবং বিবেশ -বিশিষ্ট বিলাতি নারীমূর্তির বাধানো এনগ্রেভিং টাঙানো রহিয়াছে ; কিন্তু প্রবেশদ্বারের সম্মুখবতী বৃহৎ আয়নার উপরে ষোড়শী গৃহস্বামিনীর যে প্রতিবিম্বটি পড়ে তাহা দেয়ালের কোনো ছবি অপেক্ষা সৌন্দর্যে নূ্যন নহে। গিরিবালার সৌন্দর্য অকস্মাৎ স্মালোকরশ্মির ন্যায়, বিস্ময়ের ন্যায়, নিদ্রাভঙ্গে চেতনার ন্যায়, একেবারে চকিতে আসিয়া আঘাত করে এবং এক আঘাতে অভিভূত করিয়া দিতে পারে । তাহাকে দেখিলে মনে হয়, ইহাকে দেখিবার জন্য প্ৰস্তুত ছিলাম না ; চারি দিকে এবং চিরকাল যেরূপ দেখিয়া আসিতেছি এ একেবারে হঠাৎ তাহা হইতে অনেক স্বতন্ত্র । গিরিবালাও আপনি লাবণ্যোচ্ছাসে আপনি আদ্যোপান্ত তরঙ্গিত হইয়া উঠিয়াছে । মদের ফেনা যেমন পাত্ৰ ছাপিয়া পডিয়া যায়, নবযৌবন এবং নবীন সৌন্দর্য তাহার সর্বাঙ্গে তেমনি ছাপিয়া পড়িয়া যাইতেছে । তাহার বসনে ভূষণে গমনে, তাহার বাহুর বিক্ষেপে, তাহার গ্ৰীবার ভঙ্গিতে, তাহার চঞ্চল চরণের উদ্দাম ছন্দে, নুপুরনিকণে, কঙ্কণের কিঙ্কিণীতে, তরল হাস্যে, ক্ষিপ্ৰ ভাষায়, উজ্জ্বল কটাক্ষে, একেবারে উচ্ছঙ্খল ভাবে উদবেলিত হইয়া উঠিতেছে। আপনি সর্বাঙ্গের এই উচ্ছলিত মন্দির রসে গিরিবালার একটা নেশা লাগিয়াছে । প্ৰায় দেখা যাইত, একখানি কোমল রঙিন বস্ত্রে আপনার পরিপূর্ণ দেহখানি জড়াইয়া সে ছাদের উপরে অকারণে চঞ্চল হইয়া বেড়াইতেছে । যেন মনের ভিতরকার কোনো এক অশ্রুত অব্যক্ত সংগীতের তালে তালে তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নৃত্য করিতে চাহিতেছে। আপনার অঙ্গকে নানা ভঙ্গিতে উৎক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্ত প্রক্ষিপ্ত করিয়া তাহার যেন বিশেষ কী এক আনন্দ আছে ; সে যেন আপন সৌন্দর্যের নানা দিকে নানা ঢেউ তুলিয়া