পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় Nebr N এ কথা আমার অনেকদিনের পুরোনো কথা । বহুকাল থেকেই আশা করেছিলুম, আমাদের জমিদারি যেন আমাদের প্রজাদেরই জমিদারি হয়- আমরা যেন ট্রসটির মতো থাকি । অল্প কিছু খোরাক-পোশাক দাবি করতে পারব, কিন্তু সে ওদেরই অংশীদারের মতো । কিন্তু দিনে দিনে দেখলুম, জমিদারি-রথ সে রাস্তায় গেল না- তার পরে যখন দেনার অঙ্ক বেড়ে চলল তখন মনের থেকেও সংকল্প সরাতে হল । এতে করে দুঃখ বোধ করেছি-- কোনো কথা বলি নি । এবার যদি দেনা শোধ হয় তা হলে আর-একবার আমার বহুদিনের ইচ্ছা পূৰ্ণ করবার আশা ददद । আমি যা বহুকাল ধ্যান করেছি, রাশিয়ায় দেখলুম, এরা তা কাজে খাটিয়েছে ; আমি পারি নি বলে দুঃখ হল । কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে লেজার বিষয় হবে । অল্প বয়সে জীবনের যা লক্ষ্য ছিল শ্ৰীনিকেতনে শান্তিনিকেতনে তা সম্পূর্ণ সিদ্ধ না হােক, সাধনার পথ অনেকখানি প্রশস্ত করেছি। নিজের প্রজাদের সম্বন্ধেও আমার অনেক কালের বেদনা রয়ে গেছে । মৃত্যুর আগে সে দিককার পথও কি খুলে যেতে পারব না ?-- এই পরিশিষ্টের শেষ অংশে ধনীর পোশাক আমাদের ছাড়তে হবে, নইলে লিজা ঘুচাবে না । আমার ভাগ্যবিধাতার আশ্চর্য বিধান এই যে, এখন থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবিকা নিজের চেষ্টায় উপার্জন করতে পারব । -চিঠিপত্র ৩ । প্রতিমা দেবীকে লিখিত । ১৪ অক্টোবর, ১৯৩০ এবার রাশিয়ার অভিজ্ঞতায় আমাকে গভীরভাবে অনেক কথা ভাবিয়েছে। প্রচুর উপকরণের মধ্যে আত্মসম্মানের যে বিষ্ম আছে সেটা বেশ স্পষ্ট চোখে দেখতে পেয়েছি । সেখান থেকে ফিরে এসে মেন্ডেলদের ঐশ্বর্যের মধ্যে যখন পৌছলুম, একটুও ভালো লাগল না- ব্রেমেন জাহাজের আড়ম্বর এবং অপব্যয় প্রতিদিন মনকে বিমুখ করেছে। ধনের বোঝা কী প্ৰকাণ্ড এবং কী অনর্থক ! জীবনযাত্রার কত জটিলতা কত সহজেই এড়ানো যেতে পারে । ve ve FK Sevebo জমিদারির অবস্থা লিখেছিস । যেরকম দিন আসছে তাতে জমিদারির উপরে কোনোদিন আর ভরসা রাখা চলবে না । ও জিনিসটার উপর অনেককাল থেকেই আমার মনে মনে ধিকার ছিল, এবার সেটা আরও পাকা হয়েছে । যে-সব কথা বহুকাল ভেবেছি। এবার রাশিয়ায় তার চেহারা দেখে এলুম। তাই জমিদারি ব্যবসায়ে আমার লজা বোধ হয় । আমার মন আজ উপরের তলার গদি ছেড়ে নীচে এসে বসেছে । দুঃখ এই যে, ছেলেবেলা থেকে পরোপজীবী হয়ে মানুষ হয়েছি ।-- এ দিকে দেশের ইতিহাসে একটা নূতন অধ্যায় দেখা দিয়েছে। অনেক কিছু উলট-পালট হবে । এই সময়ে বোঝা যত হালকা করতে পারব সমস্যা ততই সহজ হবে । জীবনযাত্রাকে গোড়া ঘেষে বদল করবার দিন এল, সেটা যেন অনায়াসে প্ৰসন্ন মনে করতে পারি। যারা যত বেশি নানা জালে জড়িয়ে আছে তারা তত বেশি কষ্ট পাবে । দুঃখের দিন যখন আসে তখন তাকে দায়ে পড়ে মেনে নেওয়ার চেয়ে এগিয়ে গিয়ে মেনে নেওয়া ভালো- তাতে দুঃখের ভার কমে যায়- বৃথা ঝুটােপুটি করতে হয় না । ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দুঃখ সকলকেই পেতে হবেএখনি পাচ্ছে, সংকট এড়িয়ে আরামে থাকবার প্রত্যাশা করাই ভুল । নুতন অভ্যাসের সঙ্গে নিজেকে বনিয়ে নেওয়া কিছুই শক্ত নয়, যদি অন্তরের দিকে প্ৰস্তুত হয়ে থাকি, যদি পুরাতনের বাধন আপনা হতে আলগা করে দিই,- টানাটানি করতে গেলেই বাধন হয়ে ওঠে। ফাসি ।