পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واصbلا বাছাই করবারও ক্ষমতা। কখনও ঠকে নি। তার প্রধান ছাত্রবন্ধু ছিল কানাই গুপ্ত। এর পূর্বপুরুষেরা বড়ে বড়ো সওদাগরের মুচ্ছদিগিরি করে এসেছে। বাপ নামজাদ কেরোসিন কোম্পানির আপিসে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। ভাগ্যক্রমে এরই মেয়ের বিবাহ। মধুসূদন কোমরে চাদর বেঁধে কাজে লেগে গেল। চাল বাধা, ফুলপাতায় সভা সাজানো, ছাপাখানায় দাড়িয়ে থেকে সোনার কালিতে চিঠি ছাপানে, চৌকি কাপেট ভাড়া করে আনা, গেটে দাড়িয়ে অভ্যর্থনা, গলা ভাঙিয়ে পরিবেষণ, কিছুই বাদ দিলে না। এই সুযোগে এমন বিষয়বুদ্ধি ও কাগুজ্ঞানের পরিচয় দিলে যে, রজনীবাবু ভারি খুশি । তিনি কেজে মাহুষ চেনেন, বুঝলেন এ ছেলের উন্নতি হবে। নিজের থেকে টাকা ডিপজিট দিয়ে মধুকে রজবপুরে কেরোসিনের এজেন্সিতে বসিয়ে দিলেন। সৌভাগ্যের দৌড় শুরু হল ; সেই যাত্রাপথে কেরোসিনের ডিপো কোন প্রাস্তে বিন্দু-আকারে পিছিয়ে পড়ল। জমার ঘরের মোট মোট অঙ্কের উপর পা ফেলতে ফেলতে ব্যাবসা হু-হু করে এগোল গলি থেকে সদর রাস্তায়, খুচরো থেকে পাইকিরিতে, দোকান থেকে আপিসে, উদযোগপর্ব থেকে স্বর্গারোহণে। সবাই বললে, “একেই বলে কপাল!” অর্থাৎ পূর্বজন্মের ইষ্টিমেতেই এ জন্মের গাড়ি চলছে। মধুসুদন নিজে জানত যে, তাকে ঠকাবার জন্যে অদৃষ্টের ক্রটি ছিল না, কেবল হিসেবে ভুল করে নি বলেই জীবনের অঙ্ক-ফলে পরীক্ষকের কাটা দাগ পড়ে নি। যারা হিসেবের দোষে ফেল করতে মজবুত, পরীক্ষকের পক্ষপাতের পরে তারাই কটাক্ষপাত করে থাকে। মধুসূদনের রাশ ভারী। নিজের অবস্থা সম্বন্ধে কথাবার্তা কয় না। তবে কিনা আন্দাজে বেশ বোঝা যায়, মরা গাঙে বান এসেছে। গৃহপালিত বাংলাদেশে এমন অবস্থায় সহজ মানুষে বিবাহের চিস্ত করে, জীবিতকালবর্তী সম্পত্তিভোগটাকে বংশাবলীর পথ বেয়ে মৃত্যুর পরবর্তী ভবিষ্যতে প্রসারিত করবার ইচ্ছা তাদের প্রবল হয়। কন্যাদায়িকের মধুকে উৎসাহ দিতে ক্রটি করে না, মধুসূদন বলে, “প্রথমে একটা পেট সম্পূর্ণ ভরলে তার পরে অন্য পেটের দায় নেওয়া চলে।” এর থেকে বোঝা যায়, মধুসূদনের হৃদয়টা যাই হোক, পেটটা ছোটো নয়। এই সময়ে মধুসূদনের সতর্কতায় রজবপুরের পাটের নাম দাড়িয়ে গেল। হঠাৎ মধুসূদন সব-প্রথমেই নদীর ধারের পোড়ো জমি. বেবাক কিনে ফেললে, তখন দর শস্ত। ইটের পাজ পোড়ালে বিস্তর, নেপাল থেকে এল বড়ে বড়ে শালকাঠ, সিলেট থেকে চুন, কলকাতা থেকে মালগাড়ি-বোঝাই করোগেটেড