পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ছিল। তখনকার বাংলা গদ্যে সাধুভাষার অভাব ছিল না, কিন্তু ভাষার চেহারা ফোটে নাই। তখন র্যাহারা মাসিক পত্রে লিখিতেন তাহারা গুরু সাজিয়া লিখিতেন— এইজন্য র্তাহারা পাঠকদের নিকট আত্মপ্রকাশ করেন নাই এবং এইজন্যই তাহীদের লেখার যেন একটা স্বরূপ ছিল না। যখন অবোধবন্ধু পাঠ করিতাম তখন তাহীকে ইস্কুলের পড়ার অম্ববৃত্তি বলিয়া মনে হস্তুত না। বাংলা ভাষায় বোধ করি সেই প্রথম মাসিক পত্র বাহির হইয়াছিল যাহার রচনার মধ্যে একটা স্বাদবৈচিত্র্য পাওয়া যাইত। বর্তমান বঙ্গসাহিত্যের প্রাণসঞ্চারের ইতিহাস র্যাহারা পর্যালোচনা করিবেন র্তাহারা অবোধবন্ধুকে উপেক্ষা করিতে পারিবেন না। বঙ্গদর্শনকে যদি আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের প্রভাতসূর্য বলা যায় তবে ক্ষুদ্রায়তন অবোধবন্ধুকে প্রত্যুষের শুকতার বলা যাইতে পারে। সে প্রত্যুষে অধিক লোক জাগে নাই এবং সাহিত্যকুঞ্জে বিচিত্র কলগীত কৃজিত হইয়া উঠে নাই । সেই উষালোকে কেবল একটি ভোরের পাখি সুমিষ্ট সুন্দর সুরে গান ধরিয়াছিল। সে স্বর তাহার নিজের । ঠিক ইতিহাসের কথা বলিতে পারি না— কিন্তু আমি সেই প্রথম বাংলা কবিতায় কবির নিজের সুর শুনিলাম । রাত্রির অন্ধকার যখন দূর হইতে থাকে তখন যেমন জগতের মূর্তি রেখায় রেখায় ফুটিয় ওঠে, সেইরূপ অবোধবন্ধুর গদ্যে পদ্যে যেন প্রতিভার প্রত্যুষকিরণে মূর্তির বিকাশ হইতে লাগিল। পাঠকের কল্পনার নিকটে একটি ভাবের দৃশ্য উদঘাটিত হইয়া গেল। ‘সর্বদাই হু হু করে মন, বিশ্ব যেন মরুর মতন । চারি দিকে ঝালাফালা, উ: কী জলন্ত জালা, অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গপতন।” আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে এই প্রথম বোধ হয় কবির নিজের কথা। তৎসময়ে অথবা তৎপূর্বে মাইকেলের চতুর্দশপদীতে কবির আত্মনিবেদন কখনও কখনও প্রকাশ পাইয়া থাকিবে— কিন্তু তাহ বিরল— এবং চতুর্দশপদীর সংক্ষিপ্ত পরিসরের মধ্যে আত্মকথা এমন কঠিন ও সংহত হইয় আসে যে, তাহাতে বেদনার গীতোচ্ছাস তেমন স্ফূর্তি পায় না । বিহারীলাল তখনকার ইংরেজিভাষায়-নব্যশিক্ষিত কবিদিগের ন্যায় যুদ্ধবর্ণনাসংকুল মহাকাব্য, উদ্দীপনাপূর্ণ দেশানুরাগমূলক কবিতা লিখিলেন না, এবং পুরাতন কবি