পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ૨ ૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাতে সন্দেহ নাই । তাহাদের মনের স্বাভাবিক জড়ত্ব জড়কে আশ্রয় করিতে চায়, তাহাকে অতিক্রম করিতে পারে না । ইহা তাহাদিগকে অগ্রসর করে না, বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয়। ইহা দ্বারা সে ভক্তিমুখ লাভ করিতে পারে কিন্তু তাহ মুক্তিমুখ নহে। সকল সম্প্রদায়েরই অধিকাংশ লোক সমাজের অনুসরণে অভ্যস্ত আচার পালন করেন । ব্রাহ্মদের মধ্যে অনেকে নিয়মিত কতকগুলি শবদ উচ্চারণ করেন এবং শবদ শুনিয়া যান, এবং মূৰ্তি-উপাসকদের অনেকে বাহিক পূজা ও মৌখিক জপ করিয়া কর্তব্য সারিয়া দেন। কিন্তু র্যাহার কেবল সামাজিক ব্রাহ্ম নহেন অধ্যাত্মিক ব্রাহ্ম র্তাহীদের উপাসনাকে গ্রন্থকার যেরূপ উদভ্ৰান্ত মনে করেন তাহ সেরূপ নহে । আশ্বিন ১৩০৫ জুবেয়ার রসজ্ঞ ম্যাথু আর্নল্ড ফরাসি ভাবুক জুবেয়ারের সহিত ইংরাজি-পাঠকদের পরিচয় করাইয়া দেন । যখন যাহা মনে আসিত জুবেয়ার তাহ লিখিতেন কিন্তু প্রকাশ করিতেন না। র্তাহার রচনা প্রবন্ধরচনা নহে, এক-একটি ভাবকে স্বতন্ত্ররূপে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখা । পদ্যে যেমন সনেট, যেমন শ্লোক, গদ্যে এই লেখাগুলি তেমনি । জুবেয়ারের বাক্সে দেরাজে এই লেখা কাগজসকল স্তৃপাকার হইয়া ছিল ; তাহার মৃত্যুর চোদ্দ বৎসর পরে এগুলি ছাপা হয়; তাহাও পাঠকসাধারণের জন্য নহে, কেবল বাছ বাছ অল্প গুটিকয়েক সমজদারের জন্য । জুবেয়ার নিজের রচনার সম্বন্ধে লিখিয়াছেন – ‘আমি কেবল বপন করি, নির্মাণ বা পত্তন করি না।’ অর্থাৎ তিনি ভাবগুলিকে পরস্পর গাথিয়া কিছু-একটা বানাইয়। তোলেন না, সজীব ভাবের বীজকে এক-একটি করিয়া বপন করেন । কোনো কোনো মনস্বী আপনার মনটিকে ফলের বাগান করিয়া রাখেন, তাহার বিশেষ বিশেষ চিন্তা ও চর্চার দ্বারা চিত্তকে আবৃত করেন, চতুর্দিকের নিত্যবীজবর্ষণ র্তাহীদের মনের মধ্যে অনাহূত ও অবারিত ভাবে স্থান পায় না।