পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী २२१ রবিবার সকালবেলা। ব্ৰহ্মমন্দিরে উপাসনা থেকে ফিরে এসেই বিভ। দেখতে পেলে অভীক বসে আছে তার ঘরে। বইয়ের পার্সেলের ব্রাউন মোড়ক ছিল আবর্জনার ঝুড়িতে। সেইটে নিয়ে কালি-কলমে একখান আঁচড়কাটা ছবি আঁকছিল । বিভা জিজ্ঞাসা করল, “হঠাৎ এখানে যে ” অভীক বললে, “সংগত কারণ দেখাতে পারি, কিন্তু সেটা হবে গৌণ, মুখ্য কারণটা খুলে বললে সেটা হয়তো সংগত হবে না। আর যাই হোক, সন্দেহ কোরে না যে চুরি করতে এসেছি।” বিভ। তার ডেস্কের চৌকিতে গিয়ে বসল, বললে, “দরকার যদি হয় না-হয় চুরি করলে, পুলিসে খবর দেব না।” অভীক বললে, “দরকারের হা-করা মুখের সামনে তো নিত্যই আছি। পরের ধন হরণ করা অনেক ক্ষেত্রেই পুণ্যকর্ম, পারি নে পাছে অপবাদটা দাগ দেয় পবিত্র নাস্তিক মতকে । ধার্মিকদের চেয়ে আমাদের অনেক বেশি সাবধানে চলতে হয় আমাদের নেতি দেবতার ইজ্জত বাচাতে ।” “অনেকক্ষণ তুমি বসে আছ ? “ত আছি, বসে বসে সাইকলজির একট। দুঃসাধ্য প্রব্লেম মনে মনে নাড়াচাড়া করছি যে তুমি পড়াশুনো করেছ, আর বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বুদ্ধিমুদ্ধিও কিছু আছে, তবু ভগবানকে বিশ্বাস কর কী করে। এখনও সমাধান করতে পারি নি। বোধ হয় বার বার তোমার এই ঘরে এসে এই রিসর্চের কাজটা আমাকে সম্পূর্ণ করে নিতে হবে।” “আবার বুঝি আমার ধর্মকে নিয়ে লাগলে ?” “তার কারণ তোমার ধর্ম যে আমাকে নিয়ে লেগেছে । আমাদের মধ্যে যে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে সেটা মৰ্মঘাতী। সে আমি ক্ষমা করতে পারি নে। তুমি আমাকে বিয়ে করতে পার না, যেহেতু তুমি যাকে বিশ্বাস কর আমি তাকে করি নে বুদ্ধি আছে বলে। কিন্তু তোমাকে বিয়ে করতে আমার তো কোনো বাধ নেই তুমি অবুঝের মতে সত্য মিথ্যে যাই বিশ্বাস কর-না কেন । তুমি তো নাস্তিকের জাত মারতে পার ন। আমার ধর্মের শ্রেষ্ঠত এইখানে। সব দেবতার চেয়ে তুমি আমার কাছে প্রত্যক্ষ সত্য, এ কথা ভুলিয়ে দেবার জন্যে একটি দেবতাও নেই আমার সামনে ।” বিভা চুপ করে বসে রইল। খানিকবাদে অভীক বলে উঠল, “তোমার ভগবান কি আমার বাবারই মতো। আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন ?” “আঃ কী বকছ ।”