পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩০ রবীন্দ্র-রচনাবলী । কিছুতে যে লজ্জার কারণ আছে তা যেন ও জানেই না। এই ওর অকৃত্রিম অবিবেক, এই যে উচিত-অন্তচিতের বেড়। অনায়াসে লাফ দিয়ে ডিঙিয়ে চল, এতেই মেয়েদের স্নেহ ওকে এত করে টানে। ভংসনা করবার জোর পায় না। কর্তব্যবোধকে যারা অত্যন্ত সামলে চলে মেয়েরা তাদের পায়ের ধুলো নেয়। আর যে-সব দুর্দাম তুরস্তের কোনো বালাই নেই ন্যায়-অন্যায়ের, মেয়ের তাদের বাহুবন্ধনে বাধে। ডেস্কের ব্লটিঙকাগজটার উপর খানিকক্ষণ নীল পেনসিলের দাগ-কাটাকাটি করে শেষকালে বিভা বললে, “আচ্ছ, যদি আমার হাতে টাকা থাকে তবে আমনি তোমাকে দেব। কিন্তু তোমার ওই ঘড়ি আমি কিছুতেই কিনব না।” উত্তেজিত কণ্ঠে অভীক বললে, “ভিক্ষা ? তোমার সমান ধনী যদি হতুম, তা হলে তোমার দান নিতুম উপহার বলে, দিতুম প্রত্যুপহার সমান দামের। আচ্ছ, পুরুষের কর্তব্য আমিই বরঞ্চ করছি। এই নাও এই ঘড়ি, এক পয়সাও নেব না।” । বিভা বললে, “মেয়েদের তো নেবারই সম্বন্ধ । তাতে কোনো লজ্জা নেই । তাই ব’লে এ ঘড়ি নয়। আচ্ছা শুনি, কেন তুমি ওটা বিক্রি করছ।” “তবে শোনো, তুমি তো জান, আমার অত্যন্ত বেহায় একটা ফোড গাড়ি আছে । সেটার চালচলনের টিলেমি অসহ । কেবল আমি বলেই ওর দশম দশ। ঠেকিয়ে রেখেছি। আটশো টাকা দিলেই ওর বদলে ওর বাপদাদার বয়সী একটা পুরোনো ক্রাইসলার পাবার আশা আছে। তাকে নতুন করে তুলতে পারব আমার নিজের হাতের গুণে।" “কী হবে ক্রাইসলারের গাড়িতে।” “বিয়ে করতে যাব না।” “এমন ভদ্র কাজ তুমি করবে, এ সম্ভব নয়।” “ধরেছ ঠিক। তা হলে প্রথমে তোমাকে জিজ্ঞাসা করি— শীলাকে দেখেছ, কুলদা মিত্তিরের মেয়ে ?” “দেখেছি তোমারই পাশে যখন-তখন যেখানে-সেখানে।” “আমার পাশেই ও বুক ফুলিয়ে জায়গা করে নিয়েছে আরও পাঁচজনকে ঠেকিয়ে। ও যে প্রগতিশীল। ভদ্রসম্প্রদায়ের পিলে চমকে যাবে, এইটেতেই ওর আনন্দ ।” “শুধু কি তাই, মেয়ে-সম্প্রদায়ের বুকে শেল বিধবে, তাতেও আনন্দ কম নয়।” “আমারও মনে ছিল ওই কথাটা, তোমার মুখে শোনাল ভালো। আচ্ছ মন খুলে বলে, ওই মেয়েটির সৌন্দর্য কি অন্যায় রকমের নয়, যাকে বলা যেতে পারে বিধাতার বাড়াবাড়ি।”