পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

८नोकांफूचेि నీ సి 〉や চিঠি বিলি করিয়া দিতে রাত হইয়া পড়িল। রমেশ শুইতে গেল, কিন্তু ঘুম হইল না। তাহার মনের ভিতরে গঙ্গাযমুনার মতো সাদা-কালো দুই রঙের চিন্তাধারা প্রবাহিত হইতেছিল। দুইটার কল্লোল একসঙ্গে মিশিয়া তাহার বিশ্রামক্ষণকে মুখর করিয়া তুলিতেছিল। 鲁 বারকয়েক পাশ ফিরিয়া সে উঠিয়া পড়িল । জানালার কাছে দাড়াইয়া দেখিল, তাহাদের জনশূন্ত গলির এক পাশে বাড়িগুলির ছায়া, আর-এক পাশে শুভ্ৰ জ্যোৎস্নার রেখা । রমেশ স্তন্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। যাহা নিত্য, যাহা শাস্ত, যাহা বিশ্বব্যাপী, যাহার মধ্যে দ্বন্দ্ব নাই, দ্বিধা নাই, রমেশের সমস্ত অন্তঃপ্রকৃতি বিগলিত হইয়া তাহার মধ্যে পরিব্যাপ্ত হইয়া গেল। ষে শব্দবিহীন সীমাবিহীন মহালোকের নেপথ্য হইতে চিরকাল ধরিয়া জন্ম এবং মৃত্যু, কর্ম এবং বিশ্রাম, আরম্ভ এবং অবসান, কোন অশ্রুত সংগীতের অপরূপ তালে বিশ্বরঙ্গভূমির মধ্যে প্রবেশ করিতেছে— রমেশ সেই আলোঅন্ধকারের অতীত দেশ হইতে নরনারীর যুগল প্রেমকে এই নক্ষত্রদীপালোকিত নিখিলের মধ্যে আবিভূত হইতে দেখিল। রমেশ তখন ধীরে ধীরে ছাদের উপর উঠিল। অন্নদাবাবুর বাড়ির দিকে চাহিল। সমস্ত নিস্তব্ধ। বাড়ির দেয়ালের উপরে, কার্নিসের নীচে, জানালা-দরজার খাজের মধ্যে, চুনবালিখসা ভিতের গায়ে জ্যোংস্কা এবং ছায়া বিচিত্র আকারের রেখা ফেলিয়াছে। এ কী বিস্ময় ! এই জনপূর্ণ নগরের মধ্যে ওই সামান্য গৃহের ভিতরে একটি মানবীর বেশে এ কী বিস্ময় ! এই রাজধানীতে কত ছাত্র, কত উকিল, কত প্রবাসী ও নিবাসী আছে, তাহার মধ্যে রমেশের মতো এক জন সাধারণ লোক কোথা হইতে এক দিন আশ্বিনের পীতাভ রৌদ্রে ওই বাতায়নে একটি বালিকার পাশে নীরবে দাড়াইয়া জীবনকে ও জগৎকে এক অপরিসীম-আনন্দময় রহস্তের মাঝখানে ভাসমান দেখিল, — এ কী বিস্ময় ! হৃদয়ের ভিতরে আজ এ কী বিস্ময়, হৃদয়ের বাহিরে আজ এ কী বিস্ময় ! অনেক রাত্রি পর্যন্ত রমেশ ছাদে বেড়াইল। ধীরে ধীরে কখন একসময়ে থও-চাদ সম্মুখের বাড়ির আড়ালে নামিয়া গেল। পৃথিবী দীত্রির কালিমা ঘনীভূত হইল— আকাশ তখনো বিদায়োম্মুখ আলোকের আলিঙ্গনে পাণ্ডুবর্ণ। *