পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি २¢ १ উমেশ বঁটি আনিয়া দিল । কমলা সবেগে উমেশের আহৃত তরকারি কুটিতে প্রবৃত্ত छ्झेल । উমেশ । মা, এই শাকগুলার সঙ্গে সর্ষেবাট খুব চমৎকার হয়। কমলা ক্রুদ্ধস্বরে কহিল, ”আচ্ছ, তবে সর্বে বাই।” এমনি করিয়া উমেশ যাহাতে প্রশ্রয় না পায়, কমলা সেই সতর্কতা অবলম্বন করিল। বিশেষ গম্ভীরমুখে তাহার শাক, তাহার তরকারি, তাহার বেগুন কুটিয়া রান্না 5ज्जांझेब्रां नेिळ । হায়, এই গৃহচ্যুত ছেলেটাকে প্রশ্ৰয় না দিয়াই বা কমলা থাকে কী করিয়া ? শাক-চুরির গুরুত্ব যে কতখানি তাহ কমলা ঠিক বোঝে না ; কিন্তু নিরাশ্রয় ছেলের নির্ভরলালসা যে কত একান্ত তাহা তো সে বোঝে। ওই যে কমলাকে একটুখানি খুশি করিবার জন্য এই লক্ষ্মীছাড়া বালক কাল হইতে এই কয়েকটা শাক-সংগ্রহের অবসর খুজিয়া বেড়াইতেছিল, আর-একটু হইলেই ষ্টীমার হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়াছিল, ইহার করুণা কি কমলাকে স্পর্শ না করিয়া থাকিতে পারে ? কমলা কহিল, “উমেশ, তোর জন্তে কালকের সেই দই কিছু বাকি আছে, তোকে আজ আবার দই খাওয়াইব, কিন্তু খবরদার, এমন কাজ আর কখনো করিস নে ৷” উমেশ অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া কহিল, “ম, তবে সে দই তুমি কাল খাও নাই ?” কমলা কহিল, “তোর মতো দইয়ের উপর আমার অত লোভ নাই। কিন্তু উমেশ, সব তো হইল, মাছের যোগাড় কি হইবে ? মাছ না পাইলে বাবুকে খাইতে দিব কী ? উমেশ । মাছের যোগাড় করিতে পারি মা, কিন্তু সেটা তো মিনি পয়সায় হইবার জো নাই । কমলা পুনরায় শাসনকার্ধে প্রবৃত্ত হইল। তাহার স্বন্দর দুটি ভ্র কুঞ্চিত করিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, "উমেশ, তোর মতো নির্বোধ আমি তো দেখি নাই । আমি কি তোকে মিনি পয়সায় জিনিস সংগ্ৰহ করিতে বলিয়াছি ?” গতকল্য উমেশের মনে কী করিয়া একটা ধারণা হইয়া গেছে যে, কমলা রমেশের কাছ হইতে টাকা আদায় করাটা সহজ মনে করে না। তা ছাড়া, সবস্থদ্ধ জড়াইয়া রমেশকে তাহার ভালো লাগে নাই। এই জন্য রমেশের অপেক্ষা না রাখিয়া, কেবল সে এবং কমলা, এই দুই নিরুপায়ে মিলিয়া কী উপায়ে সংসার চালাইতে পারে তাহার গুটিকতক সহজ কৌশল সে মনে মনে উদভাবন করিতেছিল। শাক-বেগুন-কাচকলা সম্বন্ধে সে একপ্রকার নিশ্চিম্ভ হইয়াছিল, কিন্তু মাছটার বিষয়ে এখনো সে যুক্তি স্থির করিতে পারে নাই। পৃথিবীতে নিঃস্বাৰ্থ ভক্তির জোরে সামান্ত দুই-মাছ পর্যন্ত