পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

1 + ८नोकाङ्कवि o " ۹۵ نه কিন্তু এইটুকু স্থখ, এইটুকু স্বাধীনতাও কমলার বেশিদিন রহিল না। রাত্রির সমস্ত কাজ শেষ হইয়া গেলেও একদিন কী কারণে নবীনকালী কমলাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। বেহারা আসিয়া খবর দিল, “বামুন-ঠাকরুনকে দেখিতে পাইলাম না।” নবীনকালী ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “সে কী রে, তবে পালাইল নাকি ?” নবীনকালী নিজে সেই রাত্রে আলো ধরিয়া ঘরে ঘরে খোজ করিয়া আসিলেন, কোথাও কমলাকে দেখিতে পাইলেন না। মুকুন্দবাবু অর্ধনিমীলিতনেত্রে গুড়গুড়ি টানিতেছিলেন ; উtহাকে গিয়া কহিলেন, “ওগো, শুনছ ? বামুন-ঠাকরুন বোধ করি পালাইল।” ইহাতেও মুকুন্দবাবুর শাস্তিভঙ্গ করিল না ; তিনি কেবল আলস্তজড়িত কণ্ঠে কহিলেন, “তখনি তো বারণ করিয়াছিলাম ; জানাশোনা লোক নয়। কিছু সরাইয়াছে নাকি ?” গৃহিণী কহিলেন,"সেদিন তাহাকে ষে শীতের কাপড়খানা পরিতে দিয়াছিলাম, সেটা তো ঘরে নাই, এ ছাড়া আর কী গিয়াছে, এখনো দেখি নাই ।” কর্তা অবিচলিত গম্ভীরস্বরে কহিলেন, “পুলিসে খবর দেওয়া যাক ৷” এক জন চাকর লণ্ঠন লইয়া পথে বাহির হইল। ইতিমধ্যে কমলা তাহার ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, নবীনকালী সে ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র তন্ন-তন্ন করিয়া দেখিতেছেন। কোনো জিনিস চুরি গেছে কি না তাহাই তিনি সন্ধান করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। এমন-সময় কমলাকে হঠাং দেখিয়া নবীনকালী বলিয়া উঠিলেন, “বলি, কী কাগুটাই করিলে ? কোথায় যাওয়া হইয়াছিল ?” কমলা কহিল, “কাজ শেষ করিয়া আমি একটুখানি বাগানে বেড়াইতেছিলাম।” নবীনকালী মুখে যাহা আসিল তাহাই বলিয়া গেলেন। বাড়ির সমস্ত চাকরবাকর দরজার কাছে আসিয়া জড়ো হইল । কমলা কোনোদিন নবীনকালীর কোনো ভংসনীয় তাহার সম্মুখে অশ্র বর্ষণ করে নাই । আজও সে কাঠের মূর্তির মতো স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়। রহিল। নবীনকালীর বাক্যবর্ষণ একটুখানি ক্ষাস্ত হইবামাত্র কমলা কহিল, “আমার প্রতি আপনারা অসন্তুষ্ট হইয়াছেন, আমাকে বিদায় করিয়া দিন।” নবীনকালী । বিদায় তো করিবই। তোমার মতো অকৃতজ্ঞকে চিরদিন ভাত-কাপড় দিয়া পুধিৰ, এমন কথা মনেও করিয়ো না । কিন্তু কেমন লোকের হাতে পড়িয়াছ সেটা আগে ভালো করিয়া জানাইয়। তবে বিদায় দিৰ । ইহার পর হইতে কমলা বাহিরে যাইতে আর সাহস করিত না । সে ঘরের মধ্যে