পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8\రిe রবীন্দ্র-রচনাবলী নলিনাক্ষ একবার চকিতের মতো কমলার মুখের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিল ; দেখিল, কমলা উংস্থকনেত্রে তাহার দিকে তাকাইয়া আছে। চারি চক্ষু মিলিত হইবামাত্র কমলা লজ্জায় মাটি হইয়া চোখ নিচু করিল। * নলিনাক্ষ কহিল, “মা, তোমার ছেলে কি এমনি সংপাত্র যে, তুমি সম্বন্ধ করিলেই হইল ? অামার মতো নীরস গম্ভীর লোককে সহজে কি কারও পছন্দ হইতে পারে।” এই কথায় কমলার চোখ আপনি আবার উপরে উঠিল, উঠিবামাত্র নলিনাক্ষের হাস্তোজ্জল দৃষ্টি তাহার উপরেই পড়িয়াছে— এবার কমলার মনে হইতে লাগিল "ঘর হইতে ছুটিয়া পালাইতে পারিলে বাচি । ক্ষেমংকরী কহিলেন, “যা যা, আর বকিস নে, তোর কথা শুনিলে আমার রাগ ধরে।” এই সভা ভঙ্গ হইয়া গেলে পৱ কমলা হেমনলিনীর সব ক’টি ফুল লইয়া একটি বড়ো মালা গীথিল। ফুলের সাজির উপরে সেই মালাটি লইয়া জলের ছিটা দিয়া সেটি নলিনাক্ষের উপাসনা-ঘরের এক পাশ্বে রাখিয়া দিল । তাহার মনে হইতে লাগিল, আজ বিদায় হইয়া যাইবার দিনে এইজন্যই হেমনলিনী সাজি ভরিয়া ফুল আনিয়াছিল— মনে করিয়া তাহার চোখ ছল ছল করিয়া উঠিল। তাহার পরে আপনার ঘরে ফিরিয়া আসিয়া তাহার মুখের দিকে নলিনাক্ষের সেই দৃষ্টিপাত কমলা অনেক ক্ষণ ধরিয়া আলোচনা করিতে লাগিল । নলিনাক্ষ কমলাকে কী মনে করিতেছে ? কমলার মনের কথা যেন নলিনাক্ষের কাছে সমস্তই প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। কমলা পূর্বে যখন নলিনাক্ষের সম্মুখে বাহির হইত না, তখন সে একরকম ছিল ভালো। এখন প্রতিদিন কমলা তাহার কাছে ধরা পড়িয়া যাইতেছে। আপনাকে গোপন করিয়া রাখিবার এই তো শাস্তি । কমলা ভাবিতে লাগিল, নিশ্চয়ই নলিনাক্ষ মনে মনে বলিতেছেন, এই হরিদাসী মেয়েটিকে মা কোথা হইতে আনিলেন, এমন নির্লজ্জ তো দেখি নাই ! নলিনাক্ষ যদি এক মুহূর্তও এমন কথা মনে করে তবে তো সে অসহ্য । কমলা রাত্রে বিছানায় শুইয়া মনে মনে খুব জোর করিয়া প্রতিজ্ঞা করিল, যেমন করিয়া হউক, কালই আপনার পরিচয় দিতে হইবে, তাহার পরে বাহ হয় তাহা হউক।’ পরদিন কমলা প্রত্যুষে উঠিয়া স্নান করিতে গেল। প্রানের পর প্রতিদিন সে একটি ছোটাে ঘটতে গঙ্গাজল আনিয়া নলিনাক্ষের উপাসনা-ঘরটি ধুইয়া মার্জন করিয়া তবে অন্ত কাজে মন দিত। আজও সে তার দিবসের প্রথম কাজটি সারিতে গিয়া দেখিল, নলিনাক্ষ আজ সকাল-সকাল তাহার উপাসনা-ঘরে প্রবেশ করিয়াছে—এমন