পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট h 8는 একাদশ পরিচ্ছেদ বসন্ত রায় যখন অস্তঃপুরে ফিরিয়া আসিলেন, তাহাকে দেখিয়া বিভা একেবারে কাদিয়া উঠিল। বসন্ত রায় আর অশ্রুসংবরণ করিতে পারিলেন না, তিনি উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কহিলেন, "দাদা, তুমি ইহার একটা উপায় করিয়া দাও।” রামচন্দ্র রায় একেবারে অধীর হইয়া উঠিলেন। তখন উদয়াদিত্য র্তাহার তরবারি হস্তে লইলেন, *এস আমার সঙ্গে সঙ্গে এস।” সকলে সঙ্গে সঙ্গে চলিল। উদয়াদিত্য কহিলেন, “বিভা, তুই এখানে থাক, তুই আসিস নে।” বিভা শুনিল না। রামচন্দ্র রায়ও কহিলেন, “না, বিতা সঙ্গে সঙ্গেই আমুক।” সেই নিস্তব্ধ রাত্রে সকলে পা টিপিয়া চলিতে লাগিল। মনে হইতে লাগিল, বিভীষিকা চারিদিক হইতে তাহার অদৃশু হস্ত প্রসারিত করিতেছে। রামচন্দ্র রায় সম্মুখে পশ্চাতে পাশ্বে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। মামার প্রতি মাঝে মাঝে সন্দেহ জন্মিতে লাগিল। অস্তঃপুর অতিক্রম করিয়া বহির্দেশে যাইবার দ্বারে আলিয়া উদয়াদিত্য দেখিলেন দ্বার রুদ্ধ। বিভা ভয়কম্পিত রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, "দাদা, নিচে যাইবার দরজা হয়তো বন্ধ করে নাই। সেইখানে চলে ।” সকলে সেই দিকে চলিল। দীর্ঘ অন্ধকার সিড়ি বাহিয়া নিচে চলিতে লাগিল। রামচন্দ্র রায়ের মনে হইল, এ সিড়ি দিয়া নামিলে বুঝি আর কেছ উঠে না, বুঝি বাসুকি-সাপের গর্তটা এইখানে, পাতালে নামিবার সিড়ি এই। সিড়ি ফুরাইলে দ্বারের কাছে গিয়া দেখিলেন দ্বার বন্ধ। আবার সকলে ধীরে ধীরে উঠিল। অস্তঃপুর হইতে বাহির হইবার যতগুলি পথ আছে সমস্তই বন্ধ। সকলে মিলিয়া দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া বেড়াইল, প্রত্যেক দ্বারে ফিরিয়া ফিরিয়া দুই-তিন বার করিয়া গেল। সকলগুলিই বন্ধ । যখন বিভা দেখিল, বাহির হইবার কোনো পথই নাই, তখন সে অশ্র মুছিয়া ফেলিল। স্বামীর হাত ধরিয়া তাহার শয়নকক্ষে লইয়া গেল। দৃঢ়পদে দ্বারের নিকট দাড়াইয়া'অকম্পিত স্বরে কহিল, “দেখিব, এ ঘর হইতে তোমাকে কে বাহির করিয়া লইতে পারে। তুমি যেখানে যাইবে, আমি তোমার আগে আগে যাইব, দেখিব আমাকে কে বাধা দেয়।” উদয়াদিত্য দ্বারের নিকট দাড়াইয়া কহিলেন, “আমাকে বধ না করিয়া কেহ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে না।” সুরমা কিছু না বলিয়া স্বামীর পাশ্বে গিয়া দাড়াইল । বৃদ্ধ বসন্ত রায় সকলের আগে আসিয়া দাড়াইলেন। মামা ধীরে ধীরে চলিয়া গেলেন। কিন্তু রামচন্দ্র রায়ের এ বন্দোবস্ত কিছুতেই ভালো