পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

● ●8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিপদের সম্ভাবনা যে, চাণক্য পণ্ডিত থাকলে লেভিদের কাছ থেকে দশ সহস্ৰ হস্ত দূরে থাকতে পরামর্শ দিতেন। এক তো মনোরাজ্যে নানাপ্রকার শোচনীয় দুর্ঘটনা ঘটবার সম্ভাবনা— তা ছাড়া সর্বদাই ভয় হয় পাছে কী কথা বলতে কী কথা বলে ফেলি, আর আমাদের অসহিষ্ণু লেডি তাদের আদবকায়দার তিলমাত্র ব্যতিক্রম সইতে না পেরে দারুণ ঘৃণায় ও লজ্জায় একেবারে অভিভূত হন। পাছে তাদের গাউনের অরণ্যের মধ্যে ভেবাচেকা খেয়ে যাই, পাছে আহারের সময় তাদের মাংস কেটে দিতে হয়, পাছে মুরগির মাংস কাটতে গিয়ে নিজের আঙল কেটে বসি– এইরকম সাত-পাচ ভেবে আমি জাহাজের লেডিদের কাছ থেকে অতি দূরে থাকতেম। আমাদের জাহাজে লেডির অভাব ছিল না, কিন্তু জেণ্টলম্যানের সর্বদা খুত খুত করতেন যে, তার মধ্যে অল্পবয়স্ক বা স্বত্র এক জনও ছিল না । পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হল। ব— মহাশয়ের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল । তার কথা অনর্গল, হাসি অজস্ৰ, আহার অপরিমিত । সকলের সঙ্গেই র্তার আলাপ, সকলের সঙ্গেই তিনি হাসিতামাশা করে বেড়ান। তার একটা গুণ আছে, তিনি কখনো বিবেচনা করে, মেজে ঘষে কথা কন না : ঠাট্টা করেন, সকল সময়ে তার মানে না থাকুক, তিনি নিজে হেসে আকুল হন । তিনি তার বয়সের ও পদমানের গাম্ভীর্য বুঝে হিসাব করে কথা কন না, মেপে জুকে হাসেন না ও দু-দিক বজায় রেখে মত প্রকাশ করেন না, এই সকল কারণে তাকে আমার ভালো লাগত। কত প্রকার যে ছেলেমামুষি করেন তার ঠিক নেই। বৃদ্ধত্বের বুদ্ধি ও বালকত্বের সাদাসিদ নিশ্চিন্ত ভাব একত্রে দেখলে আমার বড়ো ভালো লাগে। আমাকে তিনি অবতার’ বলতেন, গ্রেগরি সাহেবকে ‘গড়গড়ি’ বলতেন, আর-এক যাত্রীকে ‘রুহি মৎস্য’ বলে ডাকতেন ; সে-বেচারির অপরাধ কী তা জান ? সাধারণ মানুষদের চেয়ে তার ঘাড়ের দিকটা কিছু খাটো ছিল, তার মাথা ও শরীরের মধ্যে একটা স্বতন্ত্র যোজক পদার্থ ছিল না বললেও হয় । এই জন্যে ব— মহাশয় তাকে মৎস্তশ্রেণীভুক্ত করেছিলেন । কিন্তু আমি যে কেন অবতারপ্রেণীর মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেম, তার কারণ সহজে নির্দেশ করা যায় না । $ আমাদের জাহাজের T— মহাশয় কিছু নূতন রকমের লোক । তিনি ঘোরতর ফিলজফর মানুষ। তাকে কখনো চলিত ভাষায় কথা কইতে শুনি নি। তিনি কথা কইতেন না, বক্তৃতা দিতেন। একদিন আমরা দু-চার জনে মিলে জাহাজের ছাতে জু-দণ্ড আমোদপ্রমোদ করছিলেম, এমন সময়ে দুর্ভাগ্যক্রমে ব— মহাশয় তাকে বললেন, ‘কেমন সুন্দর তারা উঠেছে’ । এই আমাদের ফিলজফর তারার সঙ্গে মকুন্তা