পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র ¢ ዓ¢ জানলা সব বন্ধ করে বাড়ির পিছনদিকের ঘরে লুকিয়ে-চুরিয়ে বাস করে। দেখাতে চায় তারা লগুন ছেড়ে চলে গেছে। সাউথ কেনসিংটন বাগানে যাও ; ফিতে, টুপি, পালক, রেশম, পশম ও গাল-রং-করা মুখের সমষ্টি চোখ বলসে প্রজাপতির বাকের মতো বাগান আলো করে বেড়াচ্ছে না ; বাগান তেমনি সবুজ আছে, সেখানে তেমনি ফুল ফুটেছে, কিন্তু তার সজীব শ্ৰী নেই। গাড়ি ঘোড়া লোকজনের হিজিবিজি ঘুচে গিয়ে লগুনটা পরিষ্কার হয়ে গেছে । সম্প্রতি লগুনের সীজন অতীত, আমরাও লগুন ছেড়ে টনব্রিজ ওয়েলস বলে একটা আধা-পাড়াগেয়ে জায়গায় এসেছি । অনেক দিনের পর হালকা বাতাস থেয়ে বাচা গেল। হাজার হাজার চিমনি থেকে অবিশ্রান্ত পাথুরে কয়লার ধোয়া ও কয়লার গুড়ে উড়ে উড়ে লণ্ডনের হাড়ে হাড়ে প্রবেশ করেছে। রাস্তায় বেরিয়ে এসে হাত ধুলে সে হাত-ধোয় জলে বোধ করি কালির কাজ করা যায়। নিশ্বাসের সঙ্গে অবিশ্রাস্ত কয়লার-গুড়ো টেনে মগজটা বোধ হয় অত্যস্ত দাহ পদার্থ হয়ে দাড়ায় । টনব্রিজ ওয়েলস অনেক দিন থেকে তার লৌহপদার্থমিশ্রিত উৎসের জন্তে বিখ্যাত । এই উৎসের জল খাবার জন্যে এখানে অনেক যাত্রীর সমাগম হয় । উৎস শুনেই আমরা কল্পনা করলেম-না জানি কী সুন্দর দৃত হবে ; চারিদিকে পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, সারসমরালকুল-কুজিত, কমলকুমুদকহ্নার-বিকশিত সরোবর, কোকিলকুজন, মলয়-বীজন, ভ্রমর-গুঞ্জন ও অবশেষে এই মনোরম স্থানে পঞ্চশরের প্রহার ও এক ঘটি জল খেয়ে বাড়ি ফিরে আসা । গিয়ে দেখি, একটা হাটের মধ্যে একটা ছোটাে গর্ত পাথর দিয়ে বাধানে, সেখানে একটু একটু করে জল উঠছে, একটা বুড়ি কাচের গেলাস হাতে দাড়িয়ে । এক এক পেনি নিয়ে এক-এক গেলাস জল বিতরণ করছে ও অবসরমতো একটা খবরের কাগজে গতরাত্রের পালামেণ্টের সংবাদ পড়ছে । , চারদিকে দোকানবাজার ; গাছপালার কোনো সম্পর্ক নেই ; সম্মুখেই একটা কসাইয়ের দোকান, সেখানে নানা চতুষ্পদের ও “হংসমরালকুল” এর ডানা ছাড়ানো মৃতদেহ দড়িতে ঝুলছে । এই সব দেখে আমার মন এমন চটে উঠল যে, কোনোমতে বিশ্বাস হল না যে, এ জলে কোনোপ্রকার রোগ নিবারণ বা শরীরের উন্নতি হতে পারে । টনব্রিজ ওয়েলস শহরটা খুব ছোটো, দু-পা বেরোলেই গাছপালা মাঠ দেখতে পাওয়া যায়। বাড়িগুলো লণ্ডনের মতো থামবারান্দাশূন্ত, ঢালু ছাত-ওআলা সারি সারি একঘেয়ে ভাবে দাড়িয়ে ; অত্যন্ত শ্ৰীহীন দেখতে । দোকানগুলো তেমনি স্থসজ্জিত, পরিপাটি, কাচের জানলা দেওয়া । কঁাচের ভিতর থেকে সাজানো পণ্য