পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૮૧- রবীন্দ্র-রচনাবলী । বেড়া, বড়ো বড়ে গাছে ছায়া করে আছে, রাস্তার আশেপাশে ঘাস ও ঘাসের মধ্যে ডেজি প্রভৃতি বুনো ফুল। শ্রমজীবীরা ধুলোকাদা-মাখানে ময়লা কোটপ্যাণ্টলুন ও ময়লা মুখ নিয়ে আনাগোনা করছে, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে লাল লাল ফুলো ফুলো মুখে বাড়ির দরজার বাইরে কিংবা রাস্তায় খেলা করছে— এমন মোটাসোটা গোলগাল ছেলে কোনো দেশে দেখি নি। এক-একটা বাড়ির কাছে ছোটো ছোটো পুকুরের মতে, সেখানে পোষা ইসিগুলো ভাসছে। মাঠগুলো যদিও পাহাড়ে, উচুনিচু, কিন্তু চষা জমি সমতল ও পরিষ্কার। ঘাসগুলো অত্যন্ত সবুজ ও তাজা, এখানে রৌদ্র তীব্র নয় বলে ঘাসের রং আমাদের দেশের মতন জলে ষায় না, তাই এখানকার মাঠের দিকে, চেয়ে থাকতে অত্যন্ত ভালো লাগে, অজস্র স্নিগ্ধ সবুজ রঙে চোখ যেন ডুবে যায়। মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো গাছ ও সাদা সাদ বাড়িগুলো দূর থেকে ছোটাে ছোটো দেখাচ্ছে। এই রকম শূন্ত মাঠ ছাড়িয়ে অনেক দূরে এসে এক-একটা প্রকাও পাইন গাছের অরণ্য পাওয়া যায়, ঘেঁষাৰ্ঘেষি গাছে অনেক দূর জুড়ে অন্ধকার, খুব গম্ভীর, খুব নিস্তব্ধ । নবম পত্র গরমিকাল । সুন্দর স্বর্য উঠেছে। এখন দুপুর দুটো বাজে। আমাদের দেশের শীতকালের দুপুরবেলাকার বাতাসের মতো বেশ একটি মিষ্টি হাওয়া, রোদরে চারদিক ঝাঝা করছে। এমন ভালো লাগছে আর এমন একটু কেমন উদাস ভাব মনে আসছে যে কী বলব । আমরা এখন ডেভনশিয়রের অন্তর্গত টার্ক বলে এক নগরে আছি। সমুদ্রের ধারে । চারদিকে পাহাড়। অতি পরিষ্কার দিন। মেঘ নেই, কুয়াশা নেই, অন্ধকার নেই ; চারিদিকে গাছপালা, চারিদিকে পাখি ডাকছে, ফুল ফুটছে। যখন টনব্রিজ ওয়েলসে ছিলুম, তখন ভাবতুম এখানে যদি মদন থাকে, তবে অনেক বনবাদাড় ঝোপঝাপ কঁাটাগাছ হাতড়ে দু-চারটে বুনো ফুল নিয়েই কোনোমতে তাকে ফুলশর বানাতে হয় । কিন্তু টকিতে মদন যদি গ্যাটলিং কামানের মতো এমন একটা বাণ উদ্ভাবন করে থাকে, যার থেকে প্রতি মিনিটে হাজারটা করে তীর ছোড়া যায় আর সেই বাণ দিনরাত যদি কাজে ব্যস্ত থাকে, তবু মদনের ফুলশরের তহবিল এখানে দেউলে হবার কোনো সম্ভাবনা নেই, এত ফুল । যেখানে-সেখানে, পথে-ঘাটে, ফুল মাড়িয়ে চলতে হয়। আমরা রোজ