পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b \\ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ঘরে একটা পিকদান নিতান্ত আবশ্যক, কিন্তু তার ব্যবহার কুশ্ৰী বলে ঘরে রাখা হয় না, রুমালে সমস্ত কাজ চলে । আমাদের দেশের যেরকম পরিষ্কার ভাব, তাতে আমরা বরঞ্চ ঘরে একটা পিকদানি রাখতে পারি, কিন্তু জামার পকেটে এরকম একটা বীভৎস পদার্থ বহন করতে ঘূণা হয়। কিন্তু এখানে চোখেরই আধিপত্য। রুমাল কেউ দেখতে পাবে না, তা হলেই হল । চুলটি বেশ পরিষ্কার করে আঁচড়ানো থাকবে, মুখটি ও হাত দুটি সাফ থাকবে, স্নান করবার বিশেষ দরকার নেই। এখানে জামার উপরে অন্যান্য অনেক কাপড় পরে বলে জামার সমস্তটা দেখা যায় না, খালি বুকের ও হাতের কাছে একটু বেরিয়ে থাকে । একরকম জামা আছে, তার যতটুকু বেরিয়ে থাকে ততটুকু জোড়া দেওয়া, সেটুকু খুলে ধোবার বাড়ি দেওয়া যায় ; তাতে সুবিধে হচ্ছে যে ময়লা হয়ে গেলে জামা বদলাবার কোনো আবশ্যক করে না, সেই জোড়া টুকরোগুলো বদলালেই হল । এখানকার দাসীদের কোমরে এক আঁচল বাধা থাকে, সেইটি দিয়ে তারা না পোছে এমন পদার্থ নেই ; খাবার কাচের প্লেট যে দেখছি ঝক ঝক করছে, সেটিও সেই সর্ব-পাবক-আঁচল দিয়ে মোছা হয়েছে, কিন্তু তাতে কী হানি, কিছু খারাপ দেখাচ্ছে না । এখানকার লোকেরা অপরিষ্কার নয়, আমাদের দেশে যাকে 'নোংরা বলে তাই । এখানে পরিষ্কার ভাবের যে অভাব আমরা দেখতে পাই, সে অনেকটা শীতের জন্যে । আমরা যে-কোনো জিনিস হােক-না কেন, জল দিয়ে পরিষ্কার না হলে পরিষ্কার মনে করি নে । এখানে অত জল নিয়ে নাড়াচাড়া পোষায় না । তা ছাড়া শীতের জন্য এখানকার জিনিসপত্র শীঘ্ৰ নোংরা হয়ে ওঠে না । এখানে শীত ও গায়ের আবরণ থাকতে শরীর তত অপরিষ্কার হয় না । এখানে জিনিসপত্র পচে ওঠে না । এইরকম পরিষ্কারের পক্ষে নানা বিষয়ে সুবিধে । আমাদের যেমন পরিষ্কার ভাব আছে, তেমনি পরিষ্কার হওয়ার বিষয়ে অনেক ঢিলেমিও আছে। আমাদের দেশের পুষ্করিণীতে কী না ফেলে ? অপরিষ্কার জলকুণ্ডে স্নান ; তেল মেখে দুটাে ডুব দিলেই আমরা শুচিত কল্পনা করি । আমরা নিজের শরীর ও খাওয়া-দাওয়া সংক্রান্ত জিনিসের বিষয়ে বিশেষ পরিষ্কার থাকি, কিন্তু ঘরদুয়ার যথোচিত পরিষ্কার করি নে। এমন-কি, অস্বাস্থ্যকর করে তুলি । আমাদের দুই-একটি করে আলাপী হতে লাগল। ডাক্তার ম— একজন আধাবুড়ো চিকিৎসাব্যবসায়ী । তিনি একজন প্রকৃত ইংরেজ, ইংলন্ডের বহির্ভূত কোনো জিনিস তার পছন্দসই নয়। তার কাছে ক্ষুদ্র ইংলন্ডই সমস্ত পৃথিবী, তার কল্পনা কখনো ডোভার প্রণালী পার হয় নি। তার কল্পনার এমন অভাব যে, তিনি মনে করতে পারেন না। যারা বাইবেলের দশ অনুশাসন মানে না, তাদের মিথ্যে কথা বলতে কী করে সংকোচ হতে পারে। অথুস্ট লোকদের নীতির বিরুদ্ধে এই তার প্রধান যুক্তি। যে ইংরেজ নয়, যে খৃস্টান নয়, এমন একটা অপূর্ব সৃষ্টি দেখলে তার মনুষ্যত্ব কী করে থাকতে its (963 in NT I SS Nd5 &CP2 Gladly he would learn and gladly teach, five Stifs সাহিত্যের বিষয়ে তিনি আশ্চর্য কম জানেন ; কতকগুলি মাসিক পত্রিকা পড়ে তিনি প্ৰতি মাসে দুই-চারটি করে ভাসা ভাসা জ্ঞান লাভ করেন । তিনি কল্পনা করতে পারেন না। একজন ভারতীয় কী করে এডুকেটেড হতে পারে । ওখানকার মেয়েরা শীতকালে হাত গরম রাখবার জন্যে একরকম গোলাকার লোমশ পদার্থের মধ্যে হাত গুজে রাখে, তাকে মাফ বলে। প্রথম বিলেতে এসে সেই অপূর্ব পদার্থ যখন দেখি, তখন ডাক্তার মা-কে সে-দ্রব্যটা কী জিজ্ঞাসা করি । আমার অজ্ঞতায় তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। এখানকার অনেক লোকের রোগ দেখেছি, তারা আশা করেন, আমরা তাদের সমাজের প্রত্যেক ছোটােখাটাে বিষয় জানিব । একদিন একটা নাচে গিয়েছিলুম, একজন মেয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাঁধুটিকে (bride) তোমার কী রকম লাগছে ? আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “বাঁধুটি কে ?” অতগুলি মেয়ের মধ্যে একজন নববধূ কোথায় আছেন তা আমি জানতুম না। শুনে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন, তিনি বললেন, “তার মাথায় কমললেবুর ফুল দেখে চিনতে পার নি ?” দুই মিস ক-র সঙ্গে আলাপ হল । তঁরা এখানকার পাদরির মেয়ে। পাড়ার পরিবারদের দেখাশুনো, রবিবাসরিক স্কুলের বন্দোবস্ত করা, শ্রমিকদের জন্যে টেম্পারেন্স সভা স্থাপন ও তাদের