পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

d রবীন্দ্র-রচনাবলী 3 سوره নয়— বড়োকে প্রকাশ করবার জন্যে । এমন-কিছুকে প্রকাশ, যাকে সে বলে থাকে ‘মানুষের প্রকাশ, জীবযাত্রাতেও যে প্রকাশে নূ্যনত ঘটলে মাহ্য লজ্জিত হয়। সেই তার বাড়তি ভাগের প্রকাশ নিয়ে মানুষের যেমন দুঃসাধ্য প্রয়াস এমন তার সাধারণ প্রয়োজন মেটাবার জন্যও নয়। মামুষের মধ্যে যিনি বড়ো আছেন, আহারে বিহারেও পাছে র্তার অসম্মান হয় মামুষের এই এক বিষম ভাবনা ৷ ঋজু হয়ে চলতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তেই মানুষকে ভারাকর্ষণের বিরুদ্ধে মান বাচিয়ে চলতে হয় । পশুর মতো চলতে গেলে তা করতে হত না । মকুন্যত্ব বাচিয়ে চলাতেও তার নিয়ত চেষ্টা, পদে পদেই নীচে পড়বার শঙ্কা । এই মনুষ্যত্ব বাচানোর দ্বন্দ্ব মানবধর্মের সঙ্গে পশুধর্মের দ্বন্দ্ব, অর্থাং আদর্শের সঙ্গে বাস্তবের। মানুষের ইতিহাসে এই পশুও আদিম। সে টানছে তামসিকতায়, মূঢ়তার দিকে। পশু বলছে, “সহজধর্মের পথে ভোগ করো।” মানুষ বলছে, “মানবধর্মের দিকে তপস্যা করো।” যাদের মন মন্থর— যারা বলে, যা আছে তাই ভালো, যা হয়ে গেছে তাই শ্রেষ্ঠ, তারা রইল জস্তুধর্মের স্থাবর বেড়াটার মধ্যে ; তারা মুক্ত নয়, তার স্বভাব থেকে ভ্রষ্ট। তারা পূর্বলঞ্চিত ঐশ্বর্যকে বিকৃত করে, নষ্ট করে। মানুষ এক দিকে মৃত্যুর অধিকারে, আর-এক দকে অমৃতে ; এক দিকে সে ব্যক্তিগত সীমায়, আর-এক দিকে বিশ্বগত বিরাটে । এই দুয়ের কোনোটাকেই উপেক্ষা করা চলে না। মানুষ নিজেকে জানে, তদদুরে তদ্বস্তিকে চ– সে দূরেও বটে, সে নিকটেও। সেই দূরের মানুষের দাবি নিকটের মানুষের সব-কিছুকেই ছাড়িয়ে যায়। এই অপ্রত্যক্ষের দিকে মানুষের কল্পনাবৃত্তি দৌত্য করে। ভুল করে বিস্তর, যেখানে থই পায় না সেখানে অদ্ভূত স্বষ্টি দিয়ে ফাক ভরায় ; তবুও এই অপ্রতিহত প্রয়াস সত্যকেই প্রমাণ করে, মানুষের এই একটি আশ্চর্য সংস্কারের সাক্ষ্য দেয় যে, যেখানে আজও তার জানা পৌছয় নি সেখানেও শেষ হয় নি তার জানা। গাছে গাছে ঘর্ষণে আগুন জলে । জলে বলেই জলে, এই জেনে চুপ করে থাকলে মানুষের বুদ্ধিকে দোষ দেওয়া যেত না । জানবার নেই বলেই জানা যাচ্ছে না, এ কথাটা সংগত নয় তো কী । কিন্তু, মহিষ ছেলেমামুষের মতো বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগল, ঘর্ষণে আগুন জলে কেন। বুদ্ধির বেগার-খাটুনি শুরু হল। খুব সম্ভব গোড়ায় ছেলেমামুষের মতোই জবাব দিয়েছিল ; হয়তো বলেছিল, গাছের মধ্যে একটা রাগী ভূত অদৃপ্তভাবে বাস করে, মার খেলে লে রেগে আগুন হয়ে ওঠে। এইরকম সব উত্তরে মানুষের পুরাণ বোঝাই-করা । যাদের শিশুবুদ্ধি কিছুতেই বাড়তে চায় না তারা এইরকম উত্তরকে অঁাকড়ে ধরে থাকে। কিন্তু, অল্পে-সন্তুষ্ট মূঢ়তার মাঝখানেও মানুষের