পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প \©ჯ¢ বোঝাই ক’রে । কুসমি বললে, আচ্ছা দাদামশায়, এখনকার কালের একটা খুব বড়ো খবর দাও দেখি খুব ছোটো ক'রে, দেখি তোমার কেমন ক্ষমতা । আচ্ছা শোনো । শাস্তিতে কাজ চলছিল । মহাজনি নৌকোয় ঘোরতর ঝগড়া চলছে পালে আর দাড়ে। দাড়ের দল ঠকঠক্‌ করতে করতে মাঝির বিচারসভায় এসে উপস্থিত, বললে, এ তে আর সহ হয় না । ঐ যে তোমার অহংকেরে পাল, বুক ফুলিয়ে বলে আমাদের ছোটোলোক । কেননা, আমরা দিনে রাতে নীচের পাটাতনে বাধা থেকে জল ঠেলে ঠেলে চলি । আর উনি চলেন খেয়ালে, কারও হাতের ঠেলার তোয়াক্কা রাখেন না । সেইজন্তেই উনি হলেন বড়োলোক । তুমি ঠিক করে দাও কার কদর বেশি । আমরা যদি ছোটো লোক চই তবে ছোট বেঁধে কাজে ইস্তফা দেব, দেখি তুমি নৌকো চালা ও কী ক’রে । মাঝি দেখলে বিপদ, দাড় কটাকে আড়ালে টেনে নিয়ে চুপিচুপি বললে, ওর কথায় কান রিয়ো না ভায়ারা । নিতান্ত ফাপা ভাষায় ও কথা ব'লে থাকে । তোমরা জোয়ানরা সব মরি-বাচি করে না খাটলে নৌকো একেবারে অচল । আর, ঐ পাল করেন ফাক বাবুয়ানা উপরের মহলে । একটু ঝোড়ে হাওয়া দিয়েছে কি উনি কাজ বন্ধ করে গুটিমুটি মেরে পড়ে থাকেন নৌকোর চালের উপরে। তখন ফৰ্ড ফন্ড্রানি বন্ধ, সাড়াই পাওয়া যায় না। কিন্তু, সুখে-দুঃখে বিপদে-আপদে হাটে-ঘাটে তোমরাই আছে আমার ভরসা। ঐ নবাবির বোঝাটাকে যখন-তখন তোমাদের টেনে নিয়ে বেড়াতে হয় । কে বলে তোমাদের ছোটোলোক । মাঝির ভয় হল, কথাগুলো পালের কানে উঠল বুঝি। সে এসে কানে কানে বললে, পাল-মশায়, তোমার সঙ্গে কার তুলনা । কে বলে ষে তুমি নৌকো চালাও, সে তো মজুরের কর্ম। তুমি আপন ফুর্তিতে চল আর তোমার ইয়ারবক্সির তোমার ইশারায় পিছন-পিছন চলে। আবার ঝুলে পড় একটু যদি ইপি ধরে। ঐ দাড়গুলোর ইংরমিতে তুমি কান দিয়ে না ভায়া, ওদের এমনি ক’ষে বেঁধে রেখেছি যে যতই ওদের ঝপৰ্ব্বপানি থাক-না কাজ না করে উপায় নেই। শুনে পাল উঠল ফুলে। মেঘের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ছাই তুলতে লাগল। কিন্তু, লক্ষণ ভালো নয়। দাড়গুলোর মজবুত হাড়, এখন কাত হয়ে আছে, কোন দিন খাড়া হয়ে দাড়াবে, লাগাবে ঝাপটা, চৌচির হয়ে যাবে পালের গুমর । ধরা পড়বে